শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তিঃ
আমাদের সিলেট দর্পণ  ২৪ পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে , আমাদেরকে আপনাদের পরামর্শ ও মতামত দিতে পারেন news@sylhetdorpon.com এই ই-মেইলে ।
প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা থেকে বঞ্চিত গ্রামের শিক্ষার্থীরা,প্রশ্ন তাদের কবে খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান?

প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা থেকে বঞ্চিত গ্রামের শিক্ষার্থীরা,প্রশ্ন তাদের কবে খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান?

 বদরুল ইসলাম : করোনায় অপরিমেয় ক্ষতিতে পুরো বিশ্ব।বাংলাদেশ ও তার বাইরে নয়।দীর্ঘ লকডাউনের পর সব কিছুতে স্বাভাবিকতা এলেও স্বাভাবিক রূপে আজও ফিরতে পারেনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো।গত মার্চ মাস থেকে দীর্ঘ লকডাউনের পর ধীরে ধীরে সব কিছু খোলে দেওয়া হলেও বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।ধাপে ধাপে বন্ধ বেড়েই চলছে।৩ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকলেও পুনরায় তা ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।এদিকে করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সরকারি নির্দেশে পড়াশোনা এখন প্রযুক্তিনির্ভর।সেই প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে এবং পড়তে হলে শিক্ষার্থীদের চাই উচ্চগতির ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ।
কিন্তু সবার পক্ষে কি এমনটা সম্ভব?গ্রামীন শত শত দরিদ্র পিতা-মাতা যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় তাদের পক্ষে এমনটা অসম্ভব নয় কি?

এ প্রযুক্তির দ্বারা শহরের শিক্ষার্থীরা কিছুটা উপকৃত হলেও ধারেকাছে নেই গ্রামের শিক্ষার্থীরা। ইন্টারনেটের দাম, আবার কম গতির ইন্টারনেট ও ডিভাইসের স্বল্পতার কারণে ক্লাসে অংশ নিতেও পারছে না সকল শিক্ষার্থী। এদিকে সময় যতই এগিয়ে যাচ্ছে, গ্রামের শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তি নির্ভর এই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এমনকি পিছিয়ে পড়ছে। এতে বাড়ছে বৈষম্য। সংসদ টিভিতে যে ক্লাস গুলো অনুষ্ঠিত হয় তাতেও বঞ্চিত গ্রামের শিক্ষার্থীরা।কেননা অনেকের ঘরে এমনকি বাড়িতেও টিভি নেই।
এমতাবস্থায় ঝরে পড়ছে গ্রামীণ হাজার হাজার শিক্ষার্থী। জড়িত হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের অপরাধ প্রবণতায়।

অন্যদিকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালুর বিষয়টি অনেকটা নির্দেশনার মধ্যেই বন্দি হয়ে আছে।
মুষ্টিমেয় কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া অনলাইন ক্লাসে অগ্রসরতা নেই অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।

এ বিষয়ে ডি এন হাইস্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক(ইংরেজী) সাজ্জাদুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন অনলাইন ক্লাস চালু করলেও সেখানে রয়েছে ব্যাপক প্রতিকূলতা।৯০% ছাত্রছাত্রীর নেই স্মার্ট ফোন, যাদের ফোন আছে নেটওয়ার্ক সমস্যার কারনে তারাও ক্লাসে অংশগ্রহন করতে পারেনা।ফলে ক্লাস হচ্ছে না বললেই চলে।

প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা আরো সূচনীয়।গ্রামীণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা বুঝেই না অনলাইন ক্লাস কি?

দীপশিখা প্রি ক্যাডেট এন্ড হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক আলী জামিলের সাথে কথা বললে তিনি বলেন আমরা অনলাইন ক্লাস চালু করেছি তিন,চার মাসের কাছাকাছি।প্রাথমিক ভাবে কিছু ছাত্র ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিত হলেও সাপ্তাহ দুয়েক পর তেমনটা থাকেনি।শিক্ষার্থীদের ফোন দিলে অনেকের ফোন নাই,এমবি নাই,নেটওয়ার্ক সমস্যা সহ বিভিন্ন অযুহাত দেখায়।

মহামারি করোনায় জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ায় অভাবের তাড়নায় অনেক পিতা মাতা পারছেন না তাদের সন্তানদের প্রাইভেট পড়াতেও।অভাবের তাড়নায় অনেক শিশুকে ধরতে হচ্ছে পরিবারের হাল ও।
শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ফলে কেমন কাটছে তাদের সময়?কেমন চলছে তাদের লেখাপড়া? এরকম বেশ কিছু প্রশ্ন নিয়ে সরেজমিনে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন দৈনিক জাগ্রত সিলেটের এই রিপোর্টর।এতে শিক্ষার্থীরা তাদের উৎকন্ঠা আর বিরক্তিকর অনুবতি প্রকাশ করে।দীর্ঘ দিন থেকে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফলে তারা বঞ্চিত লেখাপড়া থেকে। কবে খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কবে ছুটবে তারা একসাথে প্রিয় ক্যাম্পাস, প্রিয় বিদ্যাপীঠে, সাদা শার্ট আর কালো পেন্ট পড়ে।কবে বসবে সারি সারি হয়ে একে অন্যের সাথে?

৭ম শ্রেণীর ছাত্র রেজা।খেলাদোলা করে সময় ভালোই কাটছে তার।তার লেখা পড়া কেমন চলছে জানতে চাইলে সে বলে স্কুল বন্ধ পরীক্ষাও হবে কি হবে না অনিশ্চিত, এমনিতেই উপরের ক্লাসে উঠব।লেখা পড়া না করলেও চলবে।

অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র তানভীর, তার ভাষ্যমতে এবার এমনিতেই জেএসসি পরীক্ষা হবে না।অটোপাস হলে পড়ার কি আছে।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ কেমন কাটছে সময় জানতে চাইলে সে বলে অনেকটা বিরক্তিকর সময় পার করছি।কখন স্কুল খোলবে, কখন সকালে স্কুলে যাওয়ার জন্য বের হবো সেই অপেক্ষায় আছি।অনলাইন ক্লাস কর কি না?জানতে চাইলে সে বলে অনলাইন ক্লাস কি দিয়ে করবো আমাদের স্মার্ট ফোন’ই নাই।

নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া রাসেল,লেখা পড়া ছেড়ে অনেকটা উন্মাদ ঘুরাফেরা করে।স্কুল বন্ধ হওয়ায় ঘোরা ঘুরি আর বাজে আড্ডাই যেনও তার দৈনিক রূটিন হয়ে গেছে।

এরকম একাদিন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললে এবং অনলাইন ক্লাস সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলে আমাদের অনলাইন ক্লাস করার মত মোবাইল ফোন নেই।অনেকের ফোন থাকলেও নিয়মিন এমবি ভরার সামর্থ্য নেই রয়েছে নেটওয়ার্ক সমস্যা।
গ্রামে নেটওয়ার্কের জন্য ফোনে কথা বলাটাও বেশ দুরূহ ব্যাপার।সেখানে অনলাইন ক্লাস অনেকটা আকাশ ছোয়ার মত।

এদিকে গত ৩ এপ্রিল থেকে এইচ এস সি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলে করোনার কারণে আজও তা হয়ে ওঠে নি।তবে এইচ এস সি পরীক্ষা হবে না এ তথ্য ও নিশ্চিত করা হয়েছে।এ বৎসর জেএসসি ও এস এস সি’র রেজাল্টের ভিত্তিতে ফলাফল ঘোষনা করা হবে।সিদ্ধান্ত’টা অনেকে ইতিবাচক ভাবে দেখছেন না তবুও মেনে নিতে হচ্ছে।

এদিকে দীর্ঘ করোনার তান্ডবে বন্ধ থাকা জাতীয় ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বাড়ছে সেশনজট।পরীক্ষা সময় মত না হওয়ায় বিপাকে শিক্ষার্থীরা।চাকরির বয়স ও পার হয়ে যাচ্ছে শত শত শিক্ষার্থীর।
সকল শিক্ষার্থীর মনে একই প্রশ্ন কবে খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান? কবে ফিরে পাবো পৃথিবীর স্বাভাবিকতা?

নিউজটি শেয়ার করুন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়..

© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ সিলেট দর্পণ ।