দর্পণ ডেস্কঃ রাজধানীর নাখালপাড়া থেকে এক দম্পতির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তারা হলো আজমত (৪৫) ও তার স্ত্রী ফারজানা (৩৬)। গতকাল সকাল ৯টায় নাখালপাড়ার লুকাস মোড়ের ৮৫ নম্বর বাসার নিচতলায় আশা এনজিও’র অফিস থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত দম্পতির পরিবার ও পুলিশ বলছে, আজমত ও ফারজানার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কলহ চলছিল। পুলিশ বলছে, স্ত্রীকে পরকীয়ার পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে না পারায় তাকে হত্যার পর আত্মহত্যা করে আজমত।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিহত দম্পতির গ্রামের বাড়ি নরসিংদী। তিন সন্তান নিয়ে ১৬৩ পশ্চিম নাখালপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকতেন তারা। আজমত মাছ ব্যবসায়ী ছিলেন।
আর ফারজানা ওই এনজিও’র নাখালপাড়া শাখায় গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। ওই দম্পতির বড় ছেলে রিফাত গতকাল সকালে ফোন করে পুলিশকে জানায়, বাবা-মায়ের ঘর থেকে তারা কোনো সাড়া-শব্দ পাচ্ছে না, দরজাও খুলছে না। এই খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে সকাল ৯টার দিকে তাদের লাশ উদ্ধার করে। আজমতকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় আর ফারজানাকে মেঝে থেকে উদ্ধার করা হয়। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে মরদেহ পাঠানো হয়। খবর পেয়ে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও আলামত সংগ্রহ করে। ফারজানার নাক দিয়ে রক্ত বের হওয়ায় পুলিশ প্রথমে মনে করেছিল তাকে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। তবে সিআইডি’র ক্রাইম সিন ফারজানার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পায়নি। বরং তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করার গলায় দাগ পাওয়া গেছে বলে ক্রাইম সিন ইউনিটের এক সদস্য জানিয়েছেন।
নিহতের বড় ছেলে রিফাতের বরাত দিয়ে তেজগাঁও থানার ওসি (তদন্ত) কামাল উদ্দিন জানান, ওই দম্পতি ১৬৩ পশ্চিম নাখালপাড়ায় থাকতো। ফারজানা যেহেতু এনজিও অফিসে কাজ করতো। সেহেতু এনজিও যখন বন্ধ থাকতো, বিশেষ করে শুক্র ও শনিবার ফারজানাকে পাহারাদার হিসেবে এনজিও অফিসে থাকতে হতো। সে একা ভয় পাবে বলে তার স্বামী এবং তিন সন্তানকে বন্ধের দিনগুলোতে এনজিও অফিসে নিয়ে আসতো। তারা ওখানে থাকতো, খেতো।
তাই গত বৃহস্পতিবার ফারজানার পুরো পরিবার এনজিও অফিসে যায়।
তিনি জানান, ফারজানার পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। সে ছেলে-সন্তান রেখে দুইবার কথিত প্রেমিকের সঙ্গে চলে গেছে। পরে আবার তাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এ নিয়ে আগে থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ চলছিল। তবে সপ্তাহখানেক ধরে তাদের এই কলহ তীব্র হতে থাকে। আজমতের সন্দেহ ছিল, ফারজানার এখনো পরকীয়ার সম্পর্কে রয়েছে। তাই ছেলে-সন্তানের কথা চিন্তা করে হলেও ফারজানাকে এ পথ থেকে ফিরে আসতে বারবার অনুরোধ করে আজমত। অন্যদিকে নিজেকে তালাক দিতে স্বামীকে বারবার চাপ দিচ্ছিল ফারজানা। এ বিষয় নিয়ে সপ্তাহখানেক ধরে চলতে থাকা ঝগড়া দেখে সন্তানদের ব্যাপক মন খারাপ হয়।
তাই ১৫ বছর বয়সী বড় ছেলে রিফাত গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার বাবা-মাকে নিয়ে বসে এবং বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করে। পরে আজমত রিফাতকে বলেন, বাবা তুমি তোমার রুমে যাও। আমি তোমার আম্মুর সঙ্গে একটু কথা বলবো। রিফাত ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে তার রুমে চলে যায়। ২০-২৫ মিনিট পর রিফাত রুমের দরজায় নক করলে ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না আসায় সে ভেবেছিল, বাবা-মা হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু সকালেও তাদের সাড়া-শব্দ না পেয়ে এবং অনেক ডাকাডাকির পরও দরজা না খোলায় সে পুলিশকে খবর দেয়।
তিনি আরো জানান, ফারজানার গলায় চিহ্ন পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে আজমত।