শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৯ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তিঃ
আমাদের সিলেট দর্পণ  ২৪ পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে , আমাদেরকে আপনাদের পরামর্শ ও মতামত দিতে পারেন news@sylhetdorpon.com এই ই-মেইলে ।
সম্পত্তির জন্য বোনকে হত্যা করে লাশ নদীতে নিক্ষেপ

সম্পত্তির জন্য বোনকে হত্যা করে লাশ নদীতে নিক্ষেপ

দর্পণ ডেস্ক :  সম্পত্তির লোভে নিজ বোনকে ঢাকা থেকে নেত্রকোনা নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দেন দুই ভাই। পরে বোন নিখোঁজ এই মর্মে থানায় সাধারণ ডায়রি করেন তারা।

তবে এত কিছুর পরও শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আপন ভাই শফিউল আজম ও চাচাতো শামীম হোসেন তাদের বোন শামীমা বেগমকে (৪০) হত্যার কথা অকপটে স্বীকার করেছেন।

সোমবার (৮ মার্চ) বেলা ১১টায় কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনের কনফারেন্স রুমে কুষ্টিয়ার নবাগত পুলিশ সুপার খাইরুল আলম সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

লিখিত বক্তব্যে পুলিশ সুপার বলেন, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার রানাখড়িয়া গ্রামের মৃত আশরাফ উদ্দিনের ছেলে বর্তমানে ঢাকার দক্ষিণখান কাঁচা বাজার সংগ্রামী সরণী রোডের ৩১২ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা শফিউল আজম (৫২) গত ৪ মার্চ কুষ্টিয়ার মিরপুর থানায় উপস্থিত হয়ে একটি সাধারণ ডায়রি করেন। জিডিতে শফিউল উল্লেখ করেন তার বোন শামীমা বেগম গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর রানাখড়িয়ায় বেড়াতে যাবার উদ্দেশে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে রওনা হন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা পর্যন্ত বোনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে তার যোগাযোগ হয়। এর পর থেকে বোনের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, অভিযোগের সূত্র ধরে পুলিশ গতকাল রোববার কুষ্টিয়ার মিরপুর এলাকা থেকে প্রথমে শফিকুল আজমের চাচাতো ভাই একই এলাকার নায়েব আলী মৃধার ছেলে শামীম হোসেনকে আটক করে। পরবর্তীতে ওই দিনই শফিউলকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে শামীম পুলিশকে জানায়, তার চাচাতো ভাই শফিউল কিছু দিন আগে তার চাচাতো বোন শামীমাকে নেত্রকোনা নিয়ে যাওয়ার জন্য তার কাছে সাহায্য চান। শামীমার মা মারা যাওয়ার পর চাচাতো ভাই শফিউল আজম অন্য এক নারীকে মা সাজিয়ে তার মায়ের নামে ঢাকায় ৬ তলা বাড়ি ও মার্কেট নিজের নামে লিখে নেন।

পুলিশ সুপার বলেন, জালিয়াতি করে বাড়ি ও মার্কেট নিজের নামে লিখে নেয়ার বিষয়টি জানতে পেরে শফিউলের বাবা আশরাফ উদ্দিন বাদী হয়ে ছেলের নামে ঢাকায় সিভিল কোর্টে মামলা করেন। ওই মামলার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন বোন শামীমা বেগম। প্রায় ৩০ বছর আগে নেত্রকোনা সদরে শামীমার বিয়ে হলেও অল্প দিনের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়। সেই থেকে শামীমা ঢাকাতে বাবার বাড়িতেই বসবাস করতেন। কিন্তু ভাই শফিউল বোন শামীমাকে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করতেন। ভাইয়ের অত্যাচার নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য এক পর্যায়ে শামীমা তার স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। সম্পত্তি জালিয়াতির মামলায় যাতে বোন সাক্ষী দিতে না পারে এ জন্য দুই ভাই শফিউল ও শামীম বোন শামীমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শামীম হোসেন তার চাচাতো বোন শামীমা বেগমকে ঢাকা থেকে নেত্রকোনা নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা হন এবং পরের দিন ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে নেত্রকোনা শহরের একটি হোটেলে ওঠেন। পরের দিন ২৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে শফিউল আজম হোটেলে দুজন লোক পাঠায়। ভাড়াটিয়া দু জনের সহায়তায় শামীম চাচাতো বোন শামীমা বেগমকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ গুম করার জন্য নেত্রকোনা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব দিকে কংস নদীতে ফেলে দেন। গত ৩ মার্চ দুপুর পৌনে একটার দিকে নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশ নদীতে ভাসমান অবস্থায় একজন নারীর মরদেহ উদ্ধার করে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার খাইরুল আলমের দাবি, গ্রেফতারকৃত দুই ভাই বোন শামীমা বেগমকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতারের জন্য পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে। গ্রেফতারকৃত দুই আসামিকে নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

নিউজটি শেয়ার করুন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়..

© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ সিলেট দর্পণ ।