শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৮:৩৭ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তিঃ
আমাদের সিলেট দর্পণ  ২৪ পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে , আমাদেরকে আপনাদের পরামর্শ ও মতামত দিতে পারেন news@sylhetdorpon.com এই ই-মেইলে ।
টাকা দিতে না পারায় ঘর পেলেন না জাহেদা

টাকা দিতে না পারায় ঘর পেলেন না জাহেদা

দর্পণ ডেস্ক : গৃহহীনদের জন্য সরকারের তৈরি নতুন ঘরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন জাহেদা বেগম। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এমন একটি ঘর তারও পাওয়ার কথা ছিল। তবে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে না পারায় ঘরের বরাদ্দ পাননি তিনি। কক্সবাজারের টেকনাফ হ্নীলা মৌলভীবাজার থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ভেতরে সীমান্ত সড়কের কাছাকাছি ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য তৈরি নতুন ঘরের পাশে পলিথিনের একটি ঝুপড়ি ঘরে থাকেন জাহেদা। তিনি ওই এলাকার ইউনুছ উদ্দিনের স্ত্রী।

জাহেদা বলেন, স্থানীয় মৎস্যজীবী নেতা জাহাঙ্গীর আলম প্রতিটি ঘর বরাদ্দের জন্য তাদের কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। তা ছাড়া মালপত্র বহনের খরচও দাবি করেন তিনি। যারা টাকা দিয়েছে তারা ঘর পেয়েছে। জাহাঙ্গীর বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির হ্নীলা মৌলভীবাজার ২নং ওয়ার্ডের সভাপতি। তিনি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

শনিবার প্রথম পর্যায়ে টেকনাফের গৃহহীন ৫০ পরিবারকে একটি করে ঘর দেওয়া হয়। সুবিধাভোগীরা বলছেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে ঘরগুলো তদারকির দায়িত্ব পাওয়ার কথা বলে জাহাঙ্গীর প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৫-২০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া প্রত্যেকের কাছ থেকে ঘর নির্মাণের মালপত্র বহন খরচ হিসেবে নিয়েছেন ১০ থেকে ১৪ হাজার টাকা।

সরকারি এই ঘরে দুটি রুম, একটি করিডোর, একটি বাথরুম ও একটি রান্নাঘর থাকার কথা থাকলেও টেকনাফে বাথরুম নির্মাণ করা হয়নি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় মুজিববর্ষে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারসহ মোট ২২৯টি ঘর বরাদ্দ এসেছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। তবে প্রথম পর্যায়ে ৫০ পরিবারকে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

সুবিধাভোগী জালাল উদ্দিন বলেন, টমটম চালিয়ে সীমান্তের বেড়িবাঁধে ঝুপড়ি ঘরে কষ্টের জীবন যাপন করতাম। সীমান্ত সড়ক নির্মাণকাজ শুরুর পর সেখানে থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এরপর ভূমিহীন ও গৃহহীন হয়ে পড়ি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিকতায় সীমান্ত সড়কের পাশে আমাদের জমিসহ সেমিপাকা একটি করে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে এই ঘর বরাদ্দে নাম ভাঙিয়ে জাহাঙ্গীর ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। এ ছাড়া ঘর নির্মাণের মালপত্র বহন খরচের জন্য ১১ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এরপরও ঘরগুলোর টয়লেট নির্মাণ করেনি।

আরেক সুবিধাভোগী নুর বেগম জানান, হুমকি দিয়ে ১৫-২০ হাজার করে টাকা নেওয়া হয়েছে। কেউ গবাদিপশু বিক্রি করে, কেউ শেষ সম্বল একমাত্র ফসলের জমি বন্ধক রেখে, কেউ স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে আবার কেউ ঋণ নিয়ে জাহাঙ্গীরকে টাকা দিয়েছেন। বিষয়টি সাংবাদিকদের অবহিত করায় জাহাঙ্গীরের লোকজন তাদের হুমকি ধমকি দিচ্ছেন।

সুবিধাভোগী হাবিব উল্লাহ বলেন, ঘরের জন্য ৩৮ হাজার টাকা নিয়েছেন জাহাঙ্গীর। এর মধ্যে ঘর বরাদ্দের ১০ হাজার এবং বাকি টাকা মালপত্র খরচ বহনে। তারা কেমন মানুষ, অসহায়দের জন্য প্রধানমন্ত্রী বিনা টাকায় ঘর বরাদ্দ দিলেও সেখানে মিলেমিশে টাকা খাচ্ছে সবাই।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘর বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নিইনি। তবে মালামাল বহন খরচের জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৪ হাজার ২০০ টাকা করে নিয়েছি। আমি প্রকৃত খরচের টাকাগুলো নিয়েছি। কারণ, ঘর নির্মাণে মালপত্র বহন খরচ কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি দেয়নি। আমিও নিজেও একটি ঘর বরাদ্দ পেয়েছি। তা ছাড়া এসব ঘর নির্মাণের কাজ দেখাশোনা করতে উপজেলা প্রশাসন আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। আর কোথায় কী ব্যয় করেছি, তার হিসাব কর্তৃপক্ষকে দিয়েছি।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম জানান, উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই। তা ছাড়া জাহাঙ্গীর নামে কাউকে ঘরগুলো নির্মাণের তদারকির দায়িত্বও দেওয়া হয়নি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিফাত বিন রহমান জানান, জাহাঙ্গীর আলমকে ঘর নির্মাণে তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। কোনো উপকারভোগীর কাছ থেকে ঘর এবং মালপত্র বহনের টাকা নেওয়ার কোনো নিয়মও নেই। তাদের কাছে কেউ অভিযোগও করেনি।

তিনি আরও জানান, জাহেদা বেগমের জায়গায় সমস্যা ছিল। তিনি জায়গা চিহ্নিত করে দিলে ঘর পাবেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মামুনুর রশিদ জানান, গৃহহীন মানুষগুলো প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য একটি করে ঘর পাচ্ছেন। এটাই হবে মুজিববর্ষের সেরা উপহার। এখান থেকে কেউ নাম ভাঙিয়ে টাকা নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়..

© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ সিলেট দর্পণ ।