শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০১:৪২ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তিঃ
আমাদের সিলেট দর্পণ  ২৪ পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে , আমাদেরকে আপনাদের পরামর্শ ও মতামত দিতে পারেন news@sylhetdorpon.com এই ই-মেইলে ।
স্কোপোলামিন থেকে সাবধান;মুহূর্তে নিঃস্ব হয়ে যাবেন!

স্কোপোলামিন থেকে সাবধান;মুহূর্তে নিঃস্ব হয়ে যাবেন!

নিউজ ডেস্ক ◾স্কোপোলামিন বা ভয়ঙ্কর ডেভিলস ব্রেথ, যা শয়তানের নিঃশ্বাস নামে পরিচিত। এটি একটি ভয়ঙ্কর উপাদান। যা কারও অজান্তে কিংবা কৌশল-অপকৌশলে বা জোর করে কারও নিঃশ্বাসের মাধ্যমে একবার মানবদেহে ছড়িয়ে দিতে পারলেই ওই ব্যক্তি কিছু সময়ের জন্য চলে যান প্রতারকদের নিয়ন্ত্রণে। ভয়ঙ্কর এই উপাদানের প্রয়োগে ১৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত মানুষ তার নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকেন। প্রতারকদের কথা মতোই রোবটের মতো কাজ করেন। বর্তমান সময়ে স্কোপোলামিন দেশে এক আতঙ্কের নাম।

কোন ধরনের অস্ত্র কিংবা ভয়ভীতি না দেখিয়েই টার্গেট ব্যক্তির সব কিছু লুটে নিতে অপরাধীরা এখন এর ব্যবহার করছে। রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখন ডেভিল ব্রেথ বা শয়তানের নিঃশ্বাস জাতীয় পদার্থ দিয়ে অপরাধীরা সাধারণের সর্বস্ব লুট করছে।

অপরাধ বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, শয়তানের নিঃশ্বাস নামের এ উপাদানের অপব্যবহার করে অপরাধী কারো সম্পদ লিখে নেয়া, আবার কোনো নারীর সর্বনাশ করে নীল ছবি তৈরি অথবা পছন্দের নারীকে বিয়ে করলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কারণ এটি যার ওপর প্রয়োগ করা হয় তিনি তখন নিজের মধ্যে থাকেন না। প্রতারক চক্রের সদস্যের সামনে যিনি (টার্গেট ব্যক্তি) থাকেন, তাকে যা বলা হবে তা-ই করবেন।

গত ৪ এপ্রিল সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাও গ্রামের হোসেন মিয়া ঢাকাস্থ স্প্যানিশ এম্বেসিতে যান তার বোনকে নিয়ে।তিনি টার্গেট হয়ে যান দুষ্কৃতকারী চক্রের।হাতে একটি চাবি দিয়ে তার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়ে তারা।তখন তিনি পকেটে থাকা টাকা পয়সা দিয়ে দেন।১৫/২০ মিনিট পর তিনি আমার কাছে এসে বলেন,চাবি হাতে নেওয়ার পর আমি পুতুল হয়ে গিয়েছিলাম।আমি টাকাগুলো সেচ্চায় দিয়েছি।এসম তারা আর কিছু চাইলে আমি তাও দিতাম।পরে তিনি বাড়ি থেকে বিকাশে টাকা এনে কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরেন।ঘটনাটি আমার চোখের সামনে ঘটেছে।

কিছুক্ষণ আগে আমি প্রতারকদের আনাগোনা দেখে তাকে সতর্ক করে ছিলাম।তিনি বললেন,এম্বেসি এলাকায় চুরি ডাকাতি হাইজেক সম্ভব নয়।এখানে চারিদিকে সিসি ক্যামেরা আছে।পরে বলেন,বিষয়টি এখনো স্বপ্ন মনে হচ্ছে।টাকাপয়সা নিয়েছে আমার কপাল নিতে পারেনি।

অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, স্কোপোলামিন বা শয়তানের শ্বাস বা ডেভিলস ব্রেথ হিসেবে পরিচিত পাওয়া এই মাদক মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। অন্যের দেয়া আদেশকে যান্ত্রিকভাবে অনুসরণ করতে বাধ্য করা হয়। তারা নিজে কিছু চিন্তা করতে পারেন না শুধু সামনের লোক যা বলবে তাই করেন রোবটের মত। ফলে দুর্বৃত্তরা লোকজনকে সর্বস্বান্ত করতে মোক্ষক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে এটি। সম্প্রতি এই চক্রের দৌরাত্ম বৃদ্ধি পেয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ২০১৮ সালের তালিকায় স্কোপোলামিন মাদকের তালিকায় নেই। আমাদের দেশে এটা নিয়ে কোনো আইনও নেই। তিনি এটিকে মাদকও বলতে চান না। কারণ মাদক বা নেশা বলতে যা বোঝায় সেটি এটির মধ্যে নেই।

তিনি বলেন, স্কোপোলামিন এখনো আমাদের টিম কোথাও থেকে উদ্ধার করেনি। এ সংক্রান্ত মামলাও মাদকে আছে বলে জানা নেই। কাজেই ওটা নিয়ে এখনো আমাদের ল্যাবে কোনো ধরনের টেষ্ট হয়নি। তবে যেহেতু এটি এখন প্রতারণার কাজে ব্যবহার হচ্ছে, অপরিচিতদের থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। কেউ যাতে পাশে বসে কোনো কিছু স্প্রে করতে না পারে কিংবা নাকে টিস্যু কিংবা রুমাল ধরতে না পারে সেদিকে সচেতন থাকতে হবে।

দুলাল সাহা বলেন, এটি এমন একটি ভয়ঙ্কর জিনিস। যার প্রয়োগে রিমোট কন্ট্রোল থাকে অপরাধীর হাতে। মেক্সিকানরা এটি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন এটির অপব্যবহার হচ্ছে।

ডিএনসি’র উপ-পরিচালক (নিরোধ ও শিক্ষা) মানজারুল ইসলাম বলেন, ইউএন কনভেশন অনুযায়ীও এটি ড্রাগ নয়। মাদকের ২০১৮ সালের আইনেও এটি সিডিউলভুক্ত মাদক নয়। সর্বমোট ৩৩টি কেমিক্যাল মাদকের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যেও নেই স্কোপোলামিন বা শয়তানের নিঃশ্বাস। তবে এটি অপপ্রয়োগে যেহেতু মানুষ হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে, কিছু সময়ের জন্য ভুক্তভোগীর কাছে যা চাওয়া হয় তা-ই দিয়ে দেয়, তাই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অবস্থান এটির বিরুদ্ধে।

তিনি জানান, এটি একটি কেমিক্যাল। এটি এর আগে মেডিসিন পারপাসে ব্যবহার হয়েছে বলে তার স্ট্যাডিতে রয়েছে। কাজেই এটি যাতে দেশে ঢুকতে না পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়..

© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ সিলেট দর্পণ ।