শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১০ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তিঃ
আমাদের সিলেট দর্পণ  ২৪ পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে , আমাদেরকে আপনাদের পরামর্শ ও মতামত দিতে পারেন news@sylhetdorpon.com এই ই-মেইলে ।
হাকালুকি – এ যেন ইউরোপের কৃষ্ণ সাগর

হাকালুকি – এ যেন ইউরোপের কৃষ্ণ সাগর

হাকালুকি – এ যেন ইউরোপের কৃষ্ণ সাগর
– পলাশ আফজাল

হাকালুকি হাওর এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তর হাওর । বর্ষায় তার রূপ হয় যেন এক মিনি বঙ্গপোসাগর।রূপ বৈচিত্রে তখন এই হাওর ইউরোপের কৃষ্ণ সাগরকেও হার মানায়।
চোখের সীমানা পেরিয়ে দিগদিগন্ত অতিক্রম করে নীল-রূপালী জলরাশি যেন আকাশের খুব কাছাকাছি চলে যায়! বিশাল জলরাশির ঝলমলে রূপোলী তরঙ্গের নান্দনিক মনোহারীর অবারিত দৃশ্য বইছে বর্ষার সারাবেলা সারাক্ষণ।দিনের হাকালুকি আর রাতের হাকালুকি এ দুইয়ের দৃশ্য একটার কাছে অন্যটা হার মানার নয়। নয়নাবিরাম এই বিশাল হাকালুকির নীল,রূপালী জলের মৃদু তরঙ্গ আর স্নিগ্ধ কমল বাতাস বিলানো হাজার হাজার পর্যটকদের অফুরন্ত আকর্ষণ।

সিলেট ও মৌলভীবাজার এ দুই জেলার বিশাল এলাকা জুড়ে হাকালুকির অবস্থান। দুই জেলার ৬টি উপজেলা এক একটি প্রান্ত এসে যেন আত্মীয়তার বন্ধনে মিশে গেছে মায়াবী চাদরে।তার অদূরের প্রকৃতি কিংবা দন্ডায়মান পাহাড়; সে তো অন্য রকম!
বর্ষার হাকালুকির রূপ বৈচিত্রের চেয়ে কোন ভাবে কম নয় শীতের হাকালুকি। শীতকাল, তখন প্রকৃতি যেন তার আঁচল বিছিয়ে বিলিয়ে দেয় এক অপূর্ব রূপ-যৌবনের অফুরন্ত রূপের সব সুধা সবুজের অপরুপ লীলায়।তখন প্রকৃতিতে খোঁজে পাওয়া যায় রাধাকৃষ্ণের প্রেম লীলা।

হাকালুকির বিশাল সবুজের মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় তিন শতাধিক ছোট বড়ো ঝিল আর বিল রোদের রূপালী আলোয় করে ঝিকি মিকি। অপরূপ রূপে মৃূুদু বাতাসী তরঙ্গে সে যন সেজে হয় চির যৌবনা কোন এক প্রেমিকার প্রেমের উর্বর উষ্ণ অভ্যর্থনা ভূমি। শীতের এই তিন-চার মাস ব্যাপী সেই সাইবেরিয়ান অতিথি পাখিরা এসে এক অন্যরকম সৌন্দর্যের ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করে । ঝিল থেকে ঝিলে উড়ে চলে কোলাহলে, কাটে সাতার, করে মাছ শিকার । সারাদিনের হাওর বিহার শেষ করে সূর্ষ অস্তমিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সব ঝিলের পাখিরা দলে দলে এসে লাখো পাখির দলে মিশে যায় খুব সহজে।
হাওরের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে, বড়লেখা উপজেলার পশ্চিম প্রান্তের পাখি বাড়ী এসে এক অপূর্ব খেলায় মেতে ওঠে। আর অগণিত পর্যটক এখানে এসে তা উপভোগ করেন মনের আনন্দে। তাই পর্যটকরা এই বাড়িটির নাম দিয়েছেন পাখিবাড়ী। শীতের হাওরের বুকে দাঁড়িয়ে যে দিকে তাকাবেন মনে হবে,এটাই প্রকৃতির আসল সুইজারল্যান্ড । আর বিলের পারে পারে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ বেচা-কেনার চিত্রটা অন্য রকম। বড়ো বড়ো রুই,কাতলা,মৃগেল আইড়,বোয়াল,চিতল,কার্প সহ নানা প্রজাতির মিটা জলের সব মাছই পাওয়া যায় এই হাওরে।মাছ ধরা কিংবা বেচা-কেনার এ দৃশ্যও মন মাতানোর মত। তাছাড়া এই বিস্তীর্ণ হাওর জুড়ে থাকা লাখো লাখো হেক্টর জমিতে আবাদ করা বরো ধানের শীষে ঢেউ খেলানো বাতাস বিলিয়ে যায় মৌ মৌ যত গন্ধে আর শনশনে আওয়াজে।

এশিয়ার অন্যতম এ বৃহত্তর হাওর শীত-বর্ষার দুুই মৌসুমেই পর্যটকদের আকর্ষণের অফুরন্ত সৌন্দর্যের এক অবারিত লীলাভূমি। আজকেট যুগে মানুষ কেবল খাওয়া-পরার মাঝেই সীমাবদ্ধ নয় ।অর্থনৈতিক উন্নয়ন আর মৌলিক চাহিদা পুরণের পাশাপাশি মনের মাধুর্য আর নান্দনিকতায় প্রাণ জুড়ানো প্রকৃতির সব সৃষ্টি উপভোগ করতে চায়।ঘুরে দেখতে চাই প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাখেলা।
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের আবেগময়ী হাকালুকি হাওর এ যেন ইউরোপের কৃষ্ণ সাগর।কিন্তু কেহ একবার হাকালুকির পারে আসলে আর দু’নয়নে উপভোগ করলে কৃষ্ণ সাগর দেখার স্বাদ তার মনে আর জাগবেনা।

পলাশ আফজাল
সম্পাদক – সিলেট দর্পণ।

নিউজটি শেয়ার করুন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়..

© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ সিলেট দর্পণ ।