দীর্ঘ ২৫ বছরের সাজা ভোগের পর যখন তিনি মুক্ত হলেন তখন তিনি হয়ে গেলেন এক অন্য লোকমান। বাংলা বুঝতে বড় মুশকিল হয়, বাংলায় কথা বলতে যেন আর পারেন না।কেবল ইংরেজিতেই কথা বলেন।
কারামুক্ত হওয়ার পরই লোকমান আমেরিকাতেই আবেদন জানান নিজের দেশে ফেরার জন্য। এরপর তাকে একটি ‘আউটপাস’ দিয়ে এক সপ্তাহ আগেই পাঠিয়ে দেয়া হয় বাংলাদেশে। দেশে ফিরে তার কাছে সবকিছু যেন অপরিচিত মনে হয়।দীর্ঘ কারাভোগে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি।তাছাড়া ৩২ বছর আগে যে বাংলাদেশ ছিল তাও বদলে গেছে।সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুরে নিজের বাড়ি আর কাজলশাহ এলাকার বোন দিলারা বেগমের বাসা এসবও তার মনে নেই। ভুলে গেছেন সবকিছু। কেবল সিলেটের জিন্দাবাজারের বনফুল নামটি তার স্মৃতিতে ছিল।
জানাযায়, ৩২ বছর আগে ওই বনফুলে চাকরি করতো তার বোনের জামাই। ঢাকায় নেমে বিদেশযাত্রীর গাড়িতে করে তিনি শুক্রবার দুপুরে সিলেটে ফিরেন। সিলেটে ফিরে ইংরেজিতেই কথা বলতে থাকেন। বনফুল-এ যাবেন বলে জানান। কিন্তু ঠিকানা বলতে পারেননি।এক পর্যায়ে কোন একজন তাকে নগরীর সুবহানীঘাট এলাকার বনফুলে নিয়ে যান।
সেখানে যাওয়ার পর জানাযায়, তিনি যে বনফুল খোজছেন তা এই বনফুল নয়।৩২ বছর আগে বনফুল-২ ছিল নগরীর জিন্দাবাজারে। বর্তমানে এটি রিফাত অ্যান্ড কোং। বিকাল ৩টার দিকে তিনি জিন্দাবাজারের সহির প্লাজাস্থল রিফাত অ্যান্ড কোং-তে আসা হয়। সেখানে আসার পর লোকমান উদ্দিনের ভাষা কেউ বুঝেন না।তিনি আসলে কি খোজছেন তা কারো বোধে আসে না।এমন সময় সেখানে উপস্থিত হন ওই কোম্পানির সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা মাহফুজুল হাসান তান্না। তিনি এসে ইংরেজিতেই কথা বলেন লোকমান উদ্দিনের সঙ্গে। সব তথ্য জানার পর তিনি খোঁজ নেন ওখানে ৩২ বছর আগে বনফুল-২ ছিল কিনা।এক পর্যায়ে জানতে পারেন এখানে ৩২ বছর আগে বনফুল ছিল।এরপর থেকে তান্না নিজ উদ্যোগে শুরু করেন খোঁজখবর। খুঁজতে খুঁজতে তিনি পেয়ে যান লোকমানের ছোট বোন দিলারা বেগমকে। অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে একটি হাসপাতালে ছিলেন দিলারা বেগম। ভাইয়ের খবর শুনেই তিনি স্বজনদের নিয়ে ছুটে আসেন জিন্দাবাজারের রিফাতে। সেখানে আসার পর ভাই লোকমান উদ্দিনের আউটপাসের তথ্য ও বোনের এনআইডি কার্ড যাচাইয়ের পর নিশ্চিত হওয়া যায় লোকমান ও দিলারা ভাইবোন। এ ছাড়া ৩২ বছর পর প্রথম সাক্ষাতে ভাইকে চিনতে পারেন দিলারাও। আর আমেরিকাফেরত লোকমানও বোন সহ স্বজনদের চিনতে পারেন। ভাইকে দেখে কেঁদে ফেলেন দিলারা বেগম।  কেঁদে কেঁদে জড়িয়ে ধরেন। স্বজনদের পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন লোকমান উদ্দিন।
তিনি বলেন- এটাই আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি। পরে স্বজনরা তাকে নিয়ে নগরীর কাজলশাহ এলাকার বাসায় চলে যান। লোকমান জানান – আমার স্মৃতি থেকে সবকিছু হারিয়ে গেছে। কেবল সিলেট বনফুল নামটি মনে আছে।এ ছাড়া গ্যাসফিল্ড, ফতেহপুর গ্রাম একটু একটু মনে আছে। ।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ২৫ বছর কারাগারে থাকা কালীন সময়ে দেশ বিদেশে কারও সঙ্গে তার কোন যোগাযোগ ছিলনা।
এদিকে লোকমান আহমদের গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তার পিতা মরহুম মৌ. আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন একজন সরকারি চাকুরিজীবী।তার মৃত্যুর পর অপর দুই ছেলে জামাল হোসেন ও জয়নাল আহমদ পিতার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ- সমত্তি নিজেদের নামে ভাগবন্টন করে নিয়েছেন।স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি লোকমান আহমদকে যেন তার পৈত্রিক বসতবাড়ি সহ সহায়সম্পদের অংশ ফিরিয়ে দেওয়া হয়।