উল্লেখ্য গত সোমবার জুনায়েদ আহমেদ নামের একটি ফেসবুক পেজ ও বিডি এসকে মিডিয়া নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে এসব লাইভ সম্প্রচার করেন লন্ডন প্রবাসী  বিএনপির একাধিক কমিটিতে থাকা মাওলানা শামীম।মুহুর্তেই লাইভটি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।সরগরম হয়েযায় ফেইসবুক ও ইউটিউব মাধ্যম।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মাওলানা শামীম সম্পর্কে ঘেঁটে দেখা যায়,( Mowlana Shamim) নামে তিনি একটি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছেন। এতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ২ হাজার ৬শ ২৪ জন তার বন্ধু তালিকায় যুক্ত আছেন। তিনি তার দলীয় পরিচয় দিয়েছেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ওলামা দল এর যুগ্ম আহ্বায়ক কেন্দ্রীয় কমিটি। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বরগুনা জেলা বিএনপি। তিনি শিক্ষা সম্পর্কিত তথ্য দিয়েছেন, সরকারি মাদরাসা-ই আলিয়া ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। তার ব্যক্তিগত তথ্যে অনেকটা গোপন রেখেছেন।

প্রথমে জুনায়েদ আহমেদ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে সোমবার ১১.৫৫ মিনিটে ৩২ মিনিট ৫১ সেকেন্ড লাইভ করেন মাওলানা শামীম। ওই লাইভে তিনি হেফাজত নেতা মামুনুল হককে রিমান্ডের নামে অমানবিক ও অধর্মী নির্যাতন করা হয়েছে বলে দাবি করেন।সেই সাথে ধর্মীয় উসকানিমূলক বিভিন্ন মন্তব্য উপস্থাপন করেন। যা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে অন্যায় পথে বিচলিত করতে পারে। তবে এসব মন্তব্যের সপক্ষে তার হাতে কোন প্রমাণ ছিলনা।

মুহূর্তের মধ্যে লাইভটি হেফাজত,জমাত+শিবির ও বিএনপি সমর্থিত বিভিন্ন পেজে শেয়ার ও আপলোড দেওয়া হয়ে যায়।  একইসাথে ইউটিউবের bd sk media নামের একটি চ্যানেলেও এটি লাইভ প্রচার হয়। এর আগে ১৮ এপ্রিল তিনি নিজের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে লাইভে সরকার পতনের হুমকি দেন। এছাড়া ২৮ মার্চ মাওলানা শামীমের প্রোফাইল থেকে আপলোড করা একটি ভিডিওতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করতেও দেখা গেছে।

খবর নিয়ে দেখা যায়, মাওলানা শামীম বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের হাড়িটানা গ্রামের আবদুল জব্বার মুন্সির ছেলে। তিনি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা এলাকার একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাস করেন। পরে ঢাকার গেন্ডারিয়া নেছারিয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাস করেন।

তার পিতা আবদুল জব্বার মুন্সি। তিন ছেলের মধ্যে শামীম ২য় এবং বর্তমানে লন্ডন প্রবাসী। বড় ছেলে  শাহ আলম শাহীন যুক্তরাজ্যে থাকেন। ছোট ছেলে শাহ জালাল সাইমুন এলাকায় ইট,পাথর, বালু ও সিমেন্ট ব্যবসা করেন।

জানাযায়, ২০১০ সালের শুরুর দিকে পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নে বিয়ে করেন শামীম। ওই বছরই তাকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে যান তার বড় ভাই শাহীন। কিন্তু, শামীমের উগ্র চলাফেরা, আপত্তিকর আচরণের জন্য দু’বছরের মধ্যে বড় ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি ঘটলে বড় ভাইয়ের কাছ থেকে অন্যত্র চলে যান শামীম।এযাবৎ  তিনি দেশে ফেরেননি।অবৈধভাবে লন্ডনে অবস্থান করার কারণে একদিকে দেশে ফিরতে পারছেননা অন্য দিকে পরিবার লন্ডনে নিতে পারছেননা।সে কারণে স্ত্রী তার ১০ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান নিয়ে চরদুয়ানী এলাকায় নিজের বাবার বাড়িতে থাকেন।

বরগুনার রাজনীতির ময়দানে শামীম এক পরিচিত মুখ।দেশের বাহিরে অবস্থান করার পরও ২০১৭ সালে বরগুনা জেলা বিএনপির সবশেষ গঠিত কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হয় তাকে।তিনি লন্ডনে তারেক রহমানের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ার ফলে একাধিক কমিটিতে নিজের স্থান করে নিয়েছেন। বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্ববায়ক, আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা।তাছাড়া তিনি যুক্তরাজ্য ওলামা দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

মাওলানা শামীমের বাবা আবদুল জব্বার মুন্সি বঙ্গবন্ধুর অনুসারী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একজন ব্যক্তি। ১৯৬৩ সালে বরিশাল বিএম কলেজে অধ্যয়নরত থাকাকালীন তিনি তৎকালীন ছাত্র সংসদের সহ সভাপতি (ভিপি) আমীর হোসেন আমুর একজন অনুসারী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে তিনি পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের রিলিফ কমিটি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে তিনি উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। ২০০৮ সাল থেকে তিনি দলীয় সব পদ পদবি থেকে অব্যাহতি নেন।তিনি বর্তমানে পাথরঘাটা পৌর শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ডে বসবাস করেন।

মাওলানা শামীমের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে  আবদুল জব্বার মুন্সি আক্ষেপের করে বলেন, ‘গোবরে পদ্মফুল হয়, আর আমার হয়েছে পদ্মফুলে গোবর।’ সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া লাইভ ভিডিও সম্পর্কে তিনি বলেন,আমি ফেইসবুক চালাইনা।আমি সব শুনেছি। সে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে সরকারবিরোধী আপত্তিকর নানা ধরনের কথা বলেছে, যা আমি লোকমুখে শুনেছি।সে( শামীম) একটা অপদার্থ। তার এমন কর্মকাণ্ডে আমি বাবা হিসেবে লজ্জিত, আমার পরিবার বিব্রত।’