বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৫:৪৯ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তিঃ
আমাদের সিলেট দর্পণ  ২৪ পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে , আমাদেরকে আপনাদের পরামর্শ ও মতামত দিতে পারেন news@sylhetdorpon.com এই ই-মেইলে ।
৫০ বছর ধরে যাত্রী ছাউনিতে বসবাস শতবর্ষী বৃদ্ধার

৫০ বছর ধরে যাত্রী ছাউনিতে বসবাস শতবর্ষী বৃদ্ধার

দর্পণ ডেস্ক : শতবর্ষী কৈতরের নেছার পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই। ১২ বছর আগে হারিয়েছেন দুই চোখের দৃষ্টি। কোনরকম লাঠি ভর করে চলাচল করেন। নেই কোনো জায়গা-জমি। দীর্ঘ ৫০ বছর যাত্রী ছাউনিতে বসবাস করে আসছেন তিনি।

কেউ দিলে খেতে পারেন, না হয় বেশির ভাগ সময় না খেয়েই থাকতে হচ্ছে তাকে। অসহায় এই অন্ধ বৃদ্ধার ভাগ্যে আজ পর্যন্ত জোটেনি সরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা। এমনকি জন্ম নিবন্ধন ও ভোটার আইডি কার্ডও নেই তার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৈতরের নেছা চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ১১ নম্বর গহারহাট ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের মেয়ে। ৭০ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল তার। কিন্তু বিয়ের পরই স্বামী গনি মিয়া তাকে ছেড়ে চলে যান।

সেই থেকে আর তার সঙ্গে যোগাযোগ নেই। বেঁচে আছে কিনা তাও জানে না কেউ। এরপর ২০ বছর পর তিনি যাত্রী ছাউনিতে বসবাস শুরু করেন। স্থানীয় কচুয়া উপজেলার পৌর ভূমি অফিস সহায়ক মাহবুবুর রহমান গত ১৮ থেকে ১৯ বছর যাবত তাকে কিছুটা সাহায্য ও সহযোগিতা করে আসছেন।

যাত্রী ছাউনির পাশের দোকানি বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমি ২২ বছর থেকে এখানে দোকানদারি করি। এই নারীকে কেউ কিছু দিলে খায় না হয় অনাহারেই থাকেন।’

এ সময় অন্য দোকানিরা বলেন ওঠেন, তার মতো অসহায় নারীদের পাশে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত। এ ব্যাপারে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।

অসহায় অন্ধ বৃদ্ধা কৈতরের নেছা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমি অসহায় অন্ধ। এই পৃথিবীতে আমাকে দেখার মতো কেউ নাই। এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং সরকারের কেউ কখনো আমার কাছে আসেনি। এলাকার মাহবুবুর রহমান নামে এক ছেলে গত ১৮-১৯ বছর আমাকে কিছুটা সাহায্য ও সহযোগিতা করে আসছে। যে কারণে এখনো বেঁচে আছি। আমি সরকারি কোনো ভাতাই পাইনি। সরকার যেন আমাকে মরার আগে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়।

তাকে মাঝে মাঝে সাহায্য করা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি ১৮-১৯ বছর আগে যখন সাইকেল চালিয়ে আসা যাওয়া করতাম তখন দেখতাম এই মহিলা কখনো রাস্তার পাশে, কখনো যাত্রী ছাউনের পাশে আবার কখনো বাজারে একটা চৌকির ওপর না খেয়ে শুয়ে থাকতো। তার এই অসহায় অবস্থা দেখে আমার যখন যা সাধ্য ছিল আমি দিয়ে যেতাম। আমার জানামতে স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধি অথবা সরকার কোনো ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতা করে নাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমার আবেদন, তিনি যেন এই অন্ধ ও অসহায় নারীর জন্য চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক এবং কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।’

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চাঁদমুখের সদস্য নাজমুর নাহার বলেন, ‘এই অসহায় নারীকে দেখে খুবই কষ্ট লাগে। আসা-যাওয়ার পথে যখন যা পারি দেই। আমি চাই উনার স্থায়ী একটা ব্যবস্থা হোক।’

এ বিষয়ে কচুয়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার দীপায়ন দাস শুভ বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী অফিস এই ব্যাপারে অবগত ছিল না। আমি তদন্ত করে এই অসহায় অন্ধ বৃদ্ধার জন্য সরকারি যে সব সুবিধা দেয়া যায় সেগুলোর ব্যবস্থা নেব।’

নিউজটি শেয়ার করুন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়..

© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ সিলেট দর্পণ ।