বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৩:১৮ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তিঃ
আমাদের সিলেট দর্পণ  ২৪ পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে , আমাদেরকে আপনাদের পরামর্শ ও মতামত দিতে পারেন news@sylhetdorpon.com এই ই-মেইলে ।
করোনা নয়, সারাদেশে ক্রেতা-বিক্রেতারা ভয় পান প্রশাসনকে

করোনা নয়, সারাদেশে ক্রেতা-বিক্রেতারা ভয় পান প্রশাসনকে

দর্পণ ডেস্ক : গেল বছর ঈদে সন্তানদের নতুন জামা কিনে না দিতে পারার আক্ষেপে প্রত্যেক অভিভাবকেরই রয়েছে। তাই এবার সারা দেশের মতো লক্ষ্মীপুরেও অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের জন্য নতুন পোশাক কিনতে বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। এত সরকারি নির্দেশনার কথা ভুলে গেছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। তবে তারা করোনাকে ভুলে গেলেও জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে নিজেকে রক্ষা করতে ভুলেন না।

আজ সোমবার (১২ এপ্রিল) সরেজমিনে লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে শহরের তিতাখাঁ জামে মসজিদ পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট দেখা যায়। রিকশায় যাতায়াতের ৫ মিনিটের এ সড়কে ঘণ্টাব্যাপী প্রতিদিন যানজট লেগে থাকে। বাজারে মানুষের ভিড়ে যানজটে হাটাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। তবে বাজারে পুরুষদের চেয়ে নারীদের উপস্থিতি বেশি দেখা যায়। ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের জন্য ঈদের জামা কিনতেই তারা বাজারে ভিড় জমান।

রবিবার (১১ এপ্রিল) ঘড়ির কাটা তখন বিকেল ৫টার ঘরে। হঠাৎ এক রিকশাচালক বলছেন ম্যাজিস্ট্রেট আসছে। এতেই পুরো বাজারের প্রত্যেকটি দোকানের শাটার নেমে গেছে। শাটার নামানোর ঠুসঠাস আওয়াজ পুরো বাজারজুড়ে। অনেকেই হয়তো ম্যাজিস্ট্রেটকে দেখেছেন। দোকানি ও ক্রেতারা কিছুক্ষণ গাঢাকাভাবে ছিলেন। ম্যাজিস্ট্রেট চলে যাওয়ার পর ফের দোকানিরা শাটার উঠিয়ে বিক্রিতে মন দিলেন। ক্রেতারাও পছন্দের জামাকাপড়সহ পণ্য কিনতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তখন কারোই মনে নেই মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে সরকারের নির্দেশনার কথা।

গেল রাত ৯টার দিকে সদর উপজেলার উত্তর হামছাদী ইউনিয়নের কালিবাজার গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যেকটি দোকান খোলা। দিনটিও ছিল সাপ্তাহিক বাজরের দিন। কোনো ক্রেতা বা বিক্রেতার মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। দেখে মনে হয়েছে করোনা বলতে কিছুই নেই তাদের মাঝে। জেলা শহরের উত্তর তেমুহনী এলাকার মুদি ও ফল দোকানগুলোও মধ্যরাত পর্যন্ত খোলা থাকতে দেখা যায়।

এদিকে লক্ষ্মীপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৭ জন রোগীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সদরে ৯ জন, রায়পুর তিনজন, রামগঞ্জে তিনজন, কমলনগরে ১ ও রামগতিতে একজন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে লক্ষ্মীপুর সদরে ৮ ও ঢাকায় একজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ ছাড়া সদর উপজেলায় ১০৫, রায়পুরে চারজন, রামগঞ্জে ৪৮ জন, কমলনগরে ১১ ও রামগতিতে ১২ জন বাড়িতে চিকিৎসাধীন। এ জেলায় করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৪৪ জন রোগী মারা গেছেন।

অন্যদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সোমবার ভোরে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রামগতি পৌরসভার সাবেক মেয়র আজাদ উদ্দিন চৌধুরী মারা যান। তিনি রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

জেলা শহরের চকবাজার এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে তারা লাখ লাখ টাকা খরচ করে দোকানে জামা-কাপড় উঠিয়েছেন। এতে অনেককেই ঋণ নিতে হয়েছে। গত বছরও রমজানে লকডাউনে দোকান বন্ধ ছিলো। সেই ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব হয়নি। এবারো যদি লকডাউনে দোকান বন্ধ থাকে তাহলে ঋণের টাকা পরিশোধ ও পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বাজারের তিনজন পোশাক ব্যবসায়ী জানায়, করোনাকে ভয় পেয়ে দোকান বন্ধ রাখলে তাদের সংসার চলবে কি করে? পরিবার পরিজনকে নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে দোকান খুলতেই হবে। দোকান খোলা রাখলেও বিপদ, প্রশাসনের লোকজন এসে ধাওয়া করে। ধরতে পারলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করে। এজন্য প্রশাসনের অভিযানে আসলে বাধ্য হয়ে দোকান বন্ধ রাখতে হয়।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাসুম বলেন, আমার উপজেলায় ২১টি ইউনিয়ন রয়েছে। আমি প্রত্যেকটি ইউনিয়ন পরিদর্শনে গিয়ে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছি। সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে পৌর শহরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করেন। তবে ম্যাজিস্ট্রেটকে দেখলে দোকানি ও ক্রেতারা ‘চোর-পুলিশ’ খেলা খেলছেন। নিজের থেকে কেউ সচেতন না হলে, জোর করে সচেতন করা সম্ভব নয়। করোনার ঠেকাতে সবাইকে নিজ থেকে সচেতন হতে হবে।

লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন আবদুল গফ্ফার বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব রোধে ১৪ এপ্রিল ৬ টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত লকডাউনের নিয়ে জেলার সর্বত্র প্রচারণা চালানো হচ্ছে। মানুষের মাঝে সচেতনতার বাড়ানোর জন্য যার যার অবস্থান থেকে সবাইকে কাজ করতে হবে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ জেলায় ১৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাদেরকে চিকিৎসার আওতায় আনা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়..

© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ সিলেট দর্পণ ।