শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪২ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তিঃ
আমাদের সিলেট দর্পণ  ২৪ পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে , আমাদেরকে আপনাদের পরামর্শ ও মতামত দিতে পারেন news@sylhetdorpon.com এই ই-মেইলে ।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মৃত্যু বেড়ে ১১, পুড়লো ৯ হাজার ৩০০ ঘর

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মৃত্যু বেড়ে ১১, পুড়লো ৯ হাজার ৩০০ ঘর

দর্পণ ডেস্ক : কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীর তিনটি ক্যাম্পে আগুন লাগার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের মধ্যে সাত জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। এই সাত জনের মধ্যে চার জন বয়োবৃদ্ধ নারী-পুরুষ ও ৩ জন শিশু রয়েছে। আগুনে পুড়ে গেছে ৯ হাজার ৩০০ ঘর। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ।

এ ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াতকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টায় কক্সবাজারে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহসিন। এতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত, জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ, পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিতি ছিলেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ের আগে কক্সবাজারে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে ‘সংগঠিত অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে করণীয়’ বিষয়ে বৈঠক করেন সচিব মো. মহসিন। সকালে তিনি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা শিবিরও পরিদর্শন করেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহসিন জানান, মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটিকে আগামী ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। কমিটি অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান, ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে স্থানীয় কার্যালয়ে প্রতিবেদন পর্যালোচনা, পুনর্বাসন ও ভবিষ্যৎ দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশমালা প্রণয়ন করবেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার ছাড়া মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত কমিটির অপর ছয় সদস্য হলেন, শরণার্থী বিষয়ক সেলের প্রধান (যুগ্মসচিব) মো. হাসান সারওয়ার, জেলা প্রশাসকের একজন প্রতিনিধি, পুলিশ সুপারের একজন প্রতিনিধি, ১৪ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের একজন প্রতিনিধি, উখিয়ার ক্যাম্প এইট ডব্লিউ এর ইনচার্জ, কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক, অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. খলিলুর রহমান।

আগুনে দগ্ধ হয়ে যাদের মৃত্যু :

তিনটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মারা যাওয়া ১১ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত সাত জনের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে ক্যাম্প এইট ডব্লিউতে মারা গেছেন ৫ জন। পরিচয় শনাক্ত হয়েছে দুই জনের। তারা হলেন, বশির (৭৯) ও খাদিজা (৭২)। ক্যাম্প এইট ই-তে মারা গেছে মিজান নামে চার বছর বয়সী এক শিশু। ক্যাম্প ৯-এ মারা গেছে ৫ জন। তাদের মধ্যে ৪ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। তারা হলেন, সলিমুল্লাহ (৫৫), সোনা আলী (৬৫), আব্দুল্লাহ (৮) ও আসমাউল (৭)।

কোথা থেকে আগুনের সূত্রপাত :

রোহিঙ্গা শিবির কোথা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে সে সম্পর্কে এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেনি প্রশাসন। মঙ্গলবার দুপুরে অগ্নিকাণ্ডস্থল পরিদর্শনকালে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মোশারফ হোসেন বলেছেন, এখানকার অধিবাসীদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। কথা বলে জানতে পারলাম, রান্নার চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। এ ব্যাপারে যেহেতু একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না।

অপরদিকে মঙ্গলবার বিকেলের প্রেস ব্রিফিংয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহসিন অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর এ বিষয়ে জানা যাবে।

এদিকে আগুনের সূত্রপাত নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নানা গুজবের ঢালপালা ছড়িয়েছে। রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ দাবি করছেন, পরিকল্পিতভাবে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-৯ ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ ছৈয়দ দাবি করেন, দুপুরে ক্যাম্পের পৃথক তিন-চারটি স্থানে তিনি আগুন দেখেছেন। কেউ শত্রুতা করে আগুন লাগিয়েছে কিনা তিনি বুঝতে পারছেন না। প্রায় একই কথা বলেন এ-১ ব্লকের আব্দুর রাজ্জাক। তিনি দাবি করেন, এক সঙ্গে তিন জায়গায় আগুন দেখেছেন তিনি।

তবে নিরপেক্ষ কোন সূত্র থেকে রোহিঙ্গাদের এই দাবির সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।

রোহিঙ্গা শিবির ধ্বংসস্তুপ:

উখিয়ার বালুখালীর তিনটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প আগুনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আগুনে ঘরহারা হাজারো রোহিঙ্গা বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছে। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন নিকটবর্তী রোহিঙ্গা শিবিরে। সেখানে দেখা দিয়েছে খাবার ও সুপেয় পানির সংকট।

সরেজমিনে গিয়ে মঙ্গলবার দুপুরেও বিভিন্ন জায়গায় ধোঁয়ার কুণ্ডলী চোখে পড়েছে। এর মাঝেই নতুন করে বসতি করার চেষ্টা করছে কেউ কেউ। তীব্র রোদ থেকে বাঁচতে অনেকে বিভিন্ন সংস্থার সরবরাহ করা তাবু টানিয়ে খানিকটা স্বস্তি পাওয়ার চেষ্টা করছেন।

অপরদিকে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে খাবার-পানি সরবরাহের কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহসিন বলেছেন, একজন রোহিঙ্গাও অভুক্ত থাকবে না। তারা আগে যেভাবে খাবার খেতেন সেভাবেই যেন খাবার পায় সেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সন্ধ্যার মধ্যেই তারা রাতের খাবার পাবেন। ক্ষতিগ্রস্ত সকল রোহিঙ্গা সব ধরণের সাহায্য সহযোগিতা পাবেন। স্থানীয় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্য টিন ও ঘর নির্মাণের জন্য অর্থ সহায়তা দেয়া হবে।

এর আগে সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় উখিয়ার বালুখালী ৮-ডব্লিউ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। পরে আগুন ক্যাম্পটির লাগোয়া ৮-এইচ, ৯ ও ১০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে। রাত সোয়া ১০টায় দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে আগুনের সূত্রপাতের কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি।

আইওএম বলছে নিখোঁজ ৪০০ জন :

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) দাবি করেছে, মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলো এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ১১ জন মানুষ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন, ৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন এবং আনুমানিক ৪০০ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

আইওএম’র মহাপরিচালক এন্টোনিও ভিটোরিনো বলেন, ‘এই বিপর্যয় একটি ভয়াবহ ধাক্কা যা কক্সবাজারের শরণার্থীদের মানবিক প্রয়োজনকে আরো বাড়িয়ে তুলবে। আমাদের এই পুনর্বাসনের জন্য আমার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। আমরা বাংলাদেশ সরকার, আমাদের দাতাগোষ্ঠী, সহযোগী সংস্থা এবং মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলোর সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদ আশ্রয় ফিরিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

তাৎক্ষণিক পরিস্থিতিতে দমকল বাহিনী, সেনাবাহিনী এবং মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলোসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ঘটনাস্থলে দ্রুত ছুটে যায় এবং আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়। আইওএম আহতদের সকলকে সেবা দিতে এবং মানসিক স্বাস্থ্য ও মনো-সামাজিক সহায়তা দেয়ার জন্য সংস্থাটির অ্যাম্বুলেন্স এবং ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল দল মোতায়েন করেছে। ঘটনাস্থলে রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকরা প্রথম সেবাপ্রদানকারী ছিলেন, লোকজনকে সুরক্ষায় সহায়তা করেছিলেন, আগুন নেভানোর কাজে সহায়তা করেছিলেন এবং ত্রাণ কার্যক্রমে কাজ করেছিলেন। আইওএম’র বিভিন্ন টিম এবং সহযোগী সংস্থাগুলো অগ্নিকাণ্ড থেকে বেঁচে আসা মানুষদের তাৎক্ষণিক সেবা দিতে রাতের বেলা কাজ করেছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়..

© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ সিলেট দর্পণ ।