শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৪ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তিঃ
আমাদের সিলেট দর্পণ  ২৪ পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে , আমাদেরকে আপনাদের পরামর্শ ও মতামত দিতে পারেন news@sylhetdorpon.com এই ই-মেইলে ।
মকুলের স্বপ্ন ভাঙার তিন বছর আজ

মকুলের স্বপ্ন ভাঙার তিন বছর আজ

দর্পণ ডেস্ক : আর দশটা মধ্যবিত্ত পরিবারে মতোই বেঁচে থাকার স্বপ্ন ছিল। ভালোবাসা আর হাসি খুশিতে পরিপূর্ণ থাকবে পুরো পরিবার। একে অন্যের কষ্ট ভাগ করে নিয়ে চলবে জীবনের অধ্যায়। স্বপ্ন সবারই থাকে। কারো কাছে স্বপ্ন থাকে অধরা। কারো স্বপ্ন ভোরের শিশিরের মতো। দিনের আলোতেই শুকিয়ে যায়। দিনের আলোতে স্বপ্ন শুকিয়ে যাওয়া স্বপ্নচারী যুবকের নাম রুহুল আমিন মকুল (২৭)।

ঘটনাটি ২০১৮ সালের। পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে প্রবাসে পাড়ি জমানোর সিদ্বান্ত গ্রহণ করে রুহুল আমিন মকুল (২৭)। অবশেষে পারিবারিক সিদ্বান্ত শেষে বিদেশের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হয় রুহুল আমিন মকুলের।ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে তুর্কির উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতে হবে তাকে। কাগজপত্র চুড়ান্ত। কিন্তু দৈব্যাৎ একটি ঘটনায় স্বপ্নসাধ ফিকে হয়ে যায় রুহুল আমিন মকুলের। ২০ ফেব্রুয়ারি জকিগঞ্জের বীরশ্রী ইউনিয়নের পীরনগর গ্রামের মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় তছনছ হয়ে পড়ে রুহুল আমিন মকুলের জীবন ব্যাকরণের হিসেব নিকেশ। মোটর সাইকেলে মকুলসহ মোট তিনজন। ড্রাইভিং করছিল পীরনগর গ্রামের মৃত মানিক চৌধুরী ছেলে সাজন , । মধ্যে বসা ছিল মকুল এবং পিছনে ছিল একই গ্রামের মলিক আহমদের ছেলে মিলন নামের একজন। দ্রুতবেগে চলছিল মোটর সাইকেল। মকুল বাঁধা দিলেও তাতে সায় দেয়নি সাজন। একসময় গাড়িটি ব্রিজের সাথে ধাক্কা খেলে সেখান থেকে শিটকে পড়ে মকুল। মকুলের দেহ থেকে রক্তস্রোত বের হলেও সঙ্গী দুজন থাকনে অক্ষত।

মাত্র এক সপ্তাহ পড়েই যার উঠার কথা ছিল বিমানে, সেই রুহুল আমিন মকুলের স্থান হয় ওয়েসিস হসপিটালের আইছিউ বিভাগে। রুহুল আমিন জকিগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রী ইউনিয়নের গদাধর গ্রামের তেরা মিয়ার মেঝো ছেলে।

যে ছেলেটি ছিল পরিবারের জীবীকার একমাত্র অবলম্বন, দুর্ঘটনার পর সেই ছেলের দেখভালের দায়িত্ব পড়ে পরিবারের ঘাড়ে। চিকিৎসার পর চিকিৎসা। তবুও পুরোপুরি সুস্থ্য হয়নি রুহুল আমিন মকুল। পরিবারের ভাই-বোন সবাই মিলে রুহুল আমিন মকুলের চিকিৎসাভার গ্রহণ করলেও মনে শান্তি নেই কারো। এভাবে আর কতো ? হতাশা থাকলেও হাল ছাড়েনি পরিবার সদস্যরা। তবুও আশায় বুক বেঁধে আছে পরিবার। একদিন হয়তো ভাই সুস্থ্য হয়ে আবারো পাশে দাঁড়াবে পরিবারের।

সেদিনের সেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রুহুল আমিন মকুল বলেন, ‘রক্তে রনজিৎ হয়ে সেদিন অশ্রুজল রাস্তার উপর ভেসেছিল। এতো মানুষের আনাগোনা আর কর্মব্যস্ত রাস্তা পাশে রক্তে ভেসে গিয়েও কারও মনে জায়গা করতে পারলাম না। মনের মিলন আর রক্তের বাধন,কাউকে আলাদা করতে পারে না ”

তিনি বলেন, রাস্তার পাশ থেকে উঠিয়ে রক্ত মুছে মাথার হাত দিয়ে আরেকটি জীবন আমাকে যিনি দিয়েছেন প্রথমে মহান আল্লাহর দয়ায় পরে তিনি হলেন আমার বড় ভাই এমাদ উদ্দিন।

অশ্রুভারাক্রান্ত হৃদয়ে তিনি বলেন, পাড়ি দেওয়া হয়নি স্বপ্নের দেশে। ঠিকানা হলো হসপিটালের আইছিউ কক্ষে। মহান আল্লাহর কাছে কাকুতি – মিনতি করছেন বাবা, মা, ভাই, বোন, ও আত্মীয় -স্বজন, বন্ধুদের আত্মার দোয়ায় ও আল্লাহর অশেষ রহমতেই সেদিন বেচেঁ যাই। এভাবে ক্ষত যন্ত্রণা নিয়ে এখনও আছি । তিনটি বছর জীবন থেকে অতিবাহিত হয়ে গেলো। পাওয়া হয়নি স্বাক্ষর, অন্তরের ভিতরে লুকানো ঘরের সেই মানুষটি সাথে দেখা হয়নি। বিচ্ছিন্ন হয়নি কষ্টের সেই পাড়ার, হঠাৎ দমকা হাওয়ার মতো এসে ধাবিত ঘোড়াটি তছনছ করে দিলো। কল্পনা দিয়ে সাজানো ঘরটা ভেঙে গেলো। জীবনের হাসিখুশি টা কেড়ে নিয়ে ঘোড়াটি ধাবিত হলো। জানিনা-কবে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবো ?

নিউজটি শেয়ার করুন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়..

© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ সিলেট দর্পণ ।