শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০১:৪২ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তিঃ
আমাদের সিলেট দর্পণ  ২৪ পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে , আমাদেরকে আপনাদের পরামর্শ ও মতামত দিতে পারেন news@sylhetdorpon.com এই ই-মেইলে ।
ডিম বেচেই কোটিপতি এজাহারুন

ডিম বেচেই কোটিপতি এজাহারুন

দর্পণ ডেস্ক : হাঁসের ডিম বিক্রি করেই কোটিপতি সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের শনির হাওরপাড়ের এজাহারুন মিয়া। তার খামারের ডিম দেশের বাইরেও যাচ্ছে। একসময়ের দরিদ্র পরিবারের সন্তান এজাহারুন মিয়া এখন তাহিরপুরের বিত্তশালীদের একজন।

২২ বছর আগে (১৯৯৮-৯৯ সালে) হাওরপাড়ের দুতমা গ্রামের হাঁসের খামারি রজব আলীর খামারের হাঁস দেখাশোনার চাকরি করতেন জীবনসংগ্রামী তরুণ এজাহারুন মিয়া। ২ বছর ওখানে চাকরি করার পর আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে ৩৫০টি হাঁস নিয়ে খামার করেছিলেন তিনি।

কয়েক মাসের মধ্যেই অজানা রোগে একে একে তার সকল হাঁস মারা যায়। ঋণগ্রস্ত এজাহারুন স্ত্রীসহ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টসে চাকরি নেন। ওখানে প্রায় ১২ বছর দুজনে চাকরি করে কিছু টাকা সঞ্চয় করে হাঁসের খামার করার উদ্দেশ্যে নিয়ে আবার স্ত্রী রুজি আক্তারকে নিয়ে গ্রামে ফিরেন এজাহারুন।

এবার ২৫০টি হাঁস নিয়ে যাত্রা এই খামারির। এই পর্যায়ে তিনি অপেক্ষাকৃত বড় জাতের হাঁস কিনে ডিমের ব্যবসার দিকে নজর দেন। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে অপেক্ষাকৃত বড় জাতের যেসব হাঁসের বাচ্চা ফোটানো হয়। আশ্বিন মাসে সেগুলো ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায় কিনে এনে লালন-পালন করেন। কার্তিক মাস থেকে এই হাঁসের পাড়া ডিম বিক্রি শুরু হয়। বৈশাখ মাস পর্যন্ত ডিম বিক্রি করে প্রথম বছরেই ভালো লাভ করেন তিনি।
বৈশাখ মাস পার হলে যখন ডিম পাড়া ছাড়ে এই হাঁসগুলো তখন একটু কম দামে ৪০০-৪৫০ টাকা করে বিক্রি করেন। তাতেও বহু টাকা লাভ হয় তার। এরপর আর ফিরে থাকাতে হয়নি এই খামারির। গত বছর ৩৬ লাখ টাকার ডিম বিক্রি করেছেন এই খামারি। এখন পর্যন্ত তার খামারে হাঁস আছে এক হাজার ৮৫০টি। এর মধ্যে প্রতিদিন ডিম পাড়ে এক হাজার ৬৫০টি।

তাহিরপুর গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন জানান, একসময় এজাহারুনের কিছুই ছিল না, আজ হাঁসের খামার করে তিনি তাহিরপুরের ১০ জনের একজন। তাকে সবাই হাঁস খামারি এজাহারুন বলেই চিনে।
তাহিরপুর গ্রামের অন্য আরেক বাসিন্দা মিন্টু আহমেদ বলেন, আমিও এজাহারুনের মতো একটি হাঁসের খামার দিয়েছি কিন্তু খামারের খরচ বেশি সরকার যদি হাঁস খামারিদের ঋণ দিত তাহলে হয়তো এজাহারুনের মতো আমার জীবনও বদলে যেত।

তাহিরপুর গ্রামের আরেকজন বাসিন্দা মোস্তাক মিয়া জানান, এজাহারুন খুব দরিদ্র ছিল, মানুষের খামারে কর্মচারী থাকত। একসময় হাঁসের খামার দিয়ে লসে পড়েছিল এজাহারুন। পরে সে তার বউকে নিয়ে ঢাকা চাকরি করে আবার এলাকায় এসে হাঁসের খামার করে আজ সে বিত্তবান।

কোটিপতি এজাহারুন বলেন, একসময় আমার কিছু ছিল না। আমার বাবা ও ছোট ভাই বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। টাকার অভাবে ভালো চিকিৎসা করাতে পারেনি। আজ হাঁসের খামার করে আমার সব হয়েছে। টাকা-পয়সা কোনো কিছুর অভাব নেই। কিন্তু আমার বাবা আর ছোট ভাই নেই। তাই যে কোনো সময় যদি দেখি কেউ কোনো সমস্যায় পড়েছে, আমি তাদের সাহায্য করি।

তিনি আরো বলেন, আমার খামারের ডিম ভৈরব, ময়মনসিংহ, রাজধানী ঢাকায় এমনকি তার কাছ থেকে ডিম কিনে বিদেশেও রফতানি করেন ডিম রফতানিকারকরা। তার খামারে কাজ করেও অনেকে হাঁসের খামারি হয়েছে। কেউ কেউ এখনো কাজ করছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান দাবি করেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগ হাওরের এই জেলায় হাঁসের খামারিদের অধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলছে। আর হাঁসের খামারিদের ঋণের বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।

নিউজটি শেয়ার করুন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়..

© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ সিলেট দর্পণ ।