বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৮ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তিঃ
আমাদের সিলেট দর্পণ  ২৪ পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে , আমাদেরকে আপনাদের পরামর্শ ও মতামত দিতে পারেন news@sylhetdorpon.com এই ই-মেইলে ।
পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহে আগুন ; প্রথম আক্রমণকারী আবুল পলাতক

পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহে আগুন ; প্রথম আক্রমণকারী আবুল পলাতক

দর্পণ ডেস্ক : একটি গুজব ছড়িয়ে শহীদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ আগুনে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। কিন্তু এ গুজবটিই কে ছড়ালো কিংবা তাকে প্রথমে কে মারধর করে, এ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

এরই মধ্যে শহীদুন্নবী জুয়েলকে যিনি প্রথমে মারধর করেছেন, তার নাম উঠে এসেছে। তিনি হলেন ডেকোরেটর ব্যবসায়ী আবুল হোসেন। শুক্রবার রাতের পর তাকে আর এলাকায় দেখা যায়নি।

আবুল হোসেনের বাড়িতে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। বাড়ির লোকজন বলছেন, সপরিবারে উধাও হয়ে গেছেন আবুল হোসেন। তার মুঠোফোনটিও বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বাজারে বন্ধ রয়েছে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুক্রবার থেকেই তার দোকান বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, আবুল হোসেন শুক্রবার বুড়িমারী মসজিদে এশার নামাজ আদায় করেন। এরপর থেকে এলাকায় তাকে দেখা যায়নি। দু্দিন পার হয়ে গেলেও তার কোনো হদিস মেলেনি। তবে তিনি গেলেন কোথায়, এ নিয়ে এলাকায় চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খাদেম জুবেদ আলী জানান, মসজিদে শহীদুন্নবীর সঙ্গে কথা কাটাকাটির পর তাকে মারধর শুরু করেন আবুল হোসেন। পরে তিনি বাজারে গিয়ে প্রচার করেন, শহীদুন্নবী কোরআন পদদলিত করেছেন।

অভিযোগ নিয়ে শুক্রবার রাতে আবুল হোসেনের সঙ্গে একটি শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টালের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয়।

ঘটনা স্বীকার করে আবুল হোসেন বলেন, প্রচণ্ড রাগের মাথায় শহীদুন্নবীর বাম গালে দুটি থাপ্পড় দিয়ে মসজিদের বাইরে বের করে আনি, সে সময় ভাবতে পারিনি পরিস্থিতি এমন হবে।

আবুল হোসেনের বাড়ি বুড়িমারী ইউপির ইসলামপুর গ্রামে। তিনি বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের নিয়মিত নামাজ পড়তেন।

তিনি বলেন, সেদিন আসরের নামাজ শেষে মসজিদের সামনে বুড়িমারীর বড় রেজোয়ানের (রেজোয়ান বুড়িমারী বাজার সমিতির সভাপতি ও মসজিদ কমিটির সম্পাদক) ছেলে রিয়াদ, তার দুই ম্যানেজার এবং আরেক অপরিচিত উপস্থিত ছিলেন।

আবুল হোসেন আরো বলেন, আসরের নামাজ শেষে মসজিদের ভেতরে খাদেম জুবেদ আলীর সঙ্গে শহীদুন্নবীর কথা কাটাকাটির শব্দ পেয়ে আমি এগিয়ে যাই। আমার সামনেই খাদেমকে গালিগালাজ করছিলেন জুয়েল। আমি ওই ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে তিনি একেক সময় একেকটা পরিচয় দেন। এ সময় আমি প্রচণ্ড রাগের মাথায় তার বাম গালে দুটি থাপ্পড় দিয়ে মসজিদের বাইরে নিয়ে এসে বারান্দার সিঁড়িতে বসিয়ে নাম-ঠিকানা জানতে চাই।

শহীদুন্নবীর সঙ্গী অপর ব্যক্তি (সুলতান জোবায়ের আব্বাস) আমাদের জানান, তারা রংপুর থেকে এসেছেন। এ সময় এক-দুইজন করে প্রায় ২৫-৩০ জন মানুষ জড়ো হন। আমি প্রথমে চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাতকে ফোন করি। তিনি বাইরে থাকার কথা জানিয়ে ইউপি সদস্য হাফিজুল ইসলামকে ডাকতে বলেন। এরপর হাফিজুল ইসলামকে ফোন করে ডেকে আনি এবং দুজনকে মোটরসাইকেল, খাতা-কলম ও দুটি জ্যাকেটসহ তাদের হাতে তুলে দেন। এরপর পরিস্থিতি এমন হবে আমি ভাবতে পারিনি। আমি নিজেও এমন ঘটনা পছন্দ করি না।

গুজব ছড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল হোসেন বলেন, মেম্বারের হাতে ওই ব্যক্তিদের তুলে দেয়ার পরই মসজিদ কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম প্রধান আসেন। পরে তিনিও ইউনিয়ন পরিষদে যান। কিন্তু কীভাবে কথাগুলো ছড়িয়ে পড়ল কিংবা মানুষ জড়ো হলো সেই বিষয়ে আর বলতে পারব না।

বৃহস্পতিবার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন শহীদুন্নবী জুয়েল ও তার বন্ধু সুলতান যোবায়ের। নামাজ শেষে জুয়েলের সঙ্গে মসজিদের খাদেমের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে পেট্রল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় তার লাশ।

নিহত জুয়েল রংপুর শহরের শালবন রোকেয়া সরণি এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক লাইব্রেরিয়ান ছিলেন। তার বড় মেয়ে জেবা তাসনিম এবার এইচএসসি পাস করেছেন। ছেলে তাশিকুল ইসলাম ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।

লালমনিরহাটের এসপি আবিদা সুলতানা বলেন, এ ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর তাকেও পুলিশ খুঁজছে। তবে তার অবস্থান এখনো শনাক্ত করা যায়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়..

© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ সিলেট দর্পণ ।