বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০৬ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তিঃ
আমাদের সিলেট দর্পণ  ২৪ পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে , আমাদেরকে আপনাদের পরামর্শ ও মতামত দিতে পারেন news@sylhetdorpon.com এই ই-মেইলে ।
মানুষমন্ত্র’ : জীবনাদর্শের শৈল্পিক উচ্চারণ কিংবা ছায়া

মানুষমন্ত্র’ : জীবনাদর্শের শৈল্পিক উচ্চারণ কিংবা ছায়া

সাইদুর রহমান সাঈদ : ‘মানুষমন্ত্র’ মিজান মোহাম্মদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ। এটি অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯ ঘিরে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশ করেছে চৈতন্য। মিজান মোহাম্মদ এ গ্রন্থটি তাঁর মা-বাবার নামে উৎসর্গ করেছেন। এটি সত্যিই প্রশংসনীয়। মানুষমন্ত্র গ্রন্থে বিভিন্ন স্বাদের ৪০টি কবিতা স্থান পেয়েছে। বইটির সেটআপ-গেটআপ-ছাপা-বাঁধাই চমৎকার। প্রচ্ছদেও রয়েছে মননশীলতার বিশুদ্ধ ছাপ। সব মিলিয়ে মানুষমন্ত্র কাব্যগ্রন্থটি কবিতার জগতে নিজের স্থান করে নিতে পারবে বলে আমার ধারণা।

মিজান মোহাম্মদের কবিতাগুলো পড়ে মনে হয়েছে, জীবন ও জগতকে ভেঙেচুরে দেখার নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং উপস্থাপনা কৌশলের অভিনবত্ব রয়েছে তার কবিতায়। প্রায় প্রতিটি কবিতায়ই তার গভীর জীবনবোধ ও প্রখর অন্তর্দৃষ্টির ছাপ রয়েছে। আমার মনে হয়েছে কবিতাগুলো কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার ফসল।

বিশুদ্ধ কবিতা শক্তি ও সৌন্দর্যের আঁধার। অন্যভাবে আমরা বলতে পারি, কবিতা মানব সমাজে শক্তি ও সৌন্দর্যের প্রতিনিধিত্ব করে। সবুজ পাহাড়ের পাদদেশে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি যেভাবে উজাড় করে দেয় তার সৌন্দর্য, ঠিক সেই রকম সৌন্দর্যের স্পন্দন পরিলক্ষিত হয় মিজান মোহাম্মদের কবিতায়। আর অধিকাংশ কবিতাই-প্রচ- শক্তি বুকে ধারণ করে উজ্জ্বল হয়ে আছে এ গ্রন্থের পাতায় পাতায়। শক্তি ও সৌন্দর্যের কারণেই কবিতা পরিবর্তনের শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে ওঠতে পারে। সোঁদা মাটির গন্ধের মতো কবিতার ঘ্রাণ ছুঁয়ে যায় অন্তর্লীন জগৎ। বৃষ্টির জলরাশির মতো প্রাণবন্ত, চঞ্চল ও সতেজ মিজান মোহাম্মদের অধিকাংশ কবিতাই শিল্পমূল্যে উত্তীর্ণ বলে মনি করি।

মিজান মোহাম্মদের কবিতায় ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাত সংশয় ও অসঙ্গতির খ-চিত্র ওঠে এসেছে। তার কবিতা মানুষের মনস্তত্বের সূক্ষ্মতায় জগতকে হৃদয়ের গভীরতা দিয়ে অনুভব করার এক আবেগময় জিজ্ঞাসা। কবির অজান্তে বা অবচেতনের কোনো কোনো সময় সেই জিজ্ঞাসা সভ্যতাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারে। ভ্রাম্যমাণ মেঘের ছায়ার ভেতর দিয়ে ওড়ে যাওয়া মানুষের মনস্তত্ত্ব বুঝতেও চেষ্টা করেন একজন বিশুদ্ধবাদী কবি। কবির জীবন দর্শন তাকে তাড়িত করে। তখন কবিতার পঙ্ক্তির ভেতর থেকে ঠিকরে পড়ে আলো। কবি সময় ও সমাজের ভাষ্যকার। তাই তিনি কবিতার মাঝে সময় ও সমাজচিত্রকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন।

বৈচিত্র্যময় জীবন কিংবা জীবন সংগ্রামের নানা অনুষঙ্গ নিয়ে যে মনস্তাত্তি্বক ঘোর সৃষ্টি হয়, সেই ঘোরের পাঁকচক্রে অনেক কিছুই তলিয়ে যায়। কবির প্রগাঢ় জীবনবোধ ও চিন্তাশক্তির ছায়া আমরা দেখি তার কবিতায়। যেমন- ‘আজও পাখির সঙ্গম পোড়ে প্রতিটি দুধজোছনায়/ যে জোছনাপোড়া শ্বেত-শুদ্ধ সঙ্গম/ কচলে কচলে খায় মানুষ, ছেলান সময়ে/ আউশের ধান, না মাটি বিলায় সোঁদাগন্ধ, যেখানে মিশে যায় মাইনষের সাথে…/
হাঁপিয়ে ওঠা এমন প্রতিটি অমসৃণ রাতে/ আমার পোয়াতি স্বপ্নগুলো প্রসব করে/ কিছু মানুষমন্ত্র…’ (মানুষমন্ত্র)।

জীবনের খতিয়ান খুলে দেখার মতো জাগতিক বিষয়-আশয় ওঠে এসেছে মিজান মোহাম্মদের কবিতায়। কবিতায় তার শৈল্পিক ও সাহসী উচ্চারণ তাকে নিজস্বতার দিকে নিয়ে গেছে। কিন্তু এই শ্বাপদ সংকুল জগতে তিনি অভয়ারণ্য কোথায় খুঁজে পাবেন? দেখা যাক অভয়ারণ্য সম্পর্কে তার চিন্তাচেতনা বা দৃষ্টিভঙ্গি- ‘প্রকট রৌদ্র-মরু হাওয়ায় ভেসে ভেসে চলে/ দুটি তৃষ্ণার্ত মন/ কয়েক ফোঁটা উষ্ণ জলের স্পর্শের জন্য/ নদী আর নৌকা অসহ্য যন্ত্রণায় বার বার/ রাজদ্রোহীর মতো প্রতিবাদে মাথানাড়ে/ পর্দার অন্তরালে…।’ (অভয়ারণ্য)

প্রেমিকার হাত ধরে জ্যোৎস্নার জোয়ারে সাঁতার কাটার সৌভাগ্য সবার হয় না। প্রেমিকার হাত ধরে সাগরের অপার সৌন্দর্য দেখার সৌভাগ্য সবার হয় না। কিন্তু মিজান মোহাম্মদের হয়েছে। এ গ্রন্থের ‘কারিগর’ কবিতায় এ রকম ইঙ্গিত আমরা পাই। এ রকম সংলাপধর্মী কবিতা কবির চিন্তা-চেতনায় নতুনত্বের ছাপ লক্ষ্য করা যায়।

মিজান মোহাম্মদের কবিতাগুলোর প্রতিটি পঙ্ক্তিই উল্লেখ করার মতো। মনে হয় একটি পঙ্ক্তি থেকে আরেকটি পঙ্ক্তি শক্তিশালী। ‘চিরকুট’ কবিতায় কবির আক্ষেপ- ‘যদি আঁকতে ভালোবাসার সারমর্ম/ তবে আমাকে আজ সিঁড়ি মাপতে হত না গো কুসম।’ এরকম অসংখ্য হৃদয়গ্রাহী পঙ্ক্তির সমাহার মিজান মোহাম্মদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মানুষমন্ত্রে’ তার অনেক কবিতায় রোমান্টিক উচ্চারণে করুণ বাস্তবতা ফুটে ওঠেছে। তার কোনো কোনো কবিতায় আধ্যাত্মিকতার ছাপ রয়েছে। কবিতাগুলো নানান রঙের ও নানা বর্ণের অগণিত ফুলের সমাহার। শব্দশ্রমিক বা শব্দের কারিগর হিসেবে মিজান মোহাম্মদ প্রশংসার দাবি রাখেন। এ গ্রন্থের জন্য কবিতা নির্বাচনে তিনি মোটেই দুর্বলতার পরিচয় দেননি।

লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক

সাইদুর রহমান সাঈদ : ‘মানুষমন্ত্র’ মিজান মোহাম্মদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ। এটি অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯ ঘিরে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশ করেছে চৈতন্য। মিজান মোহাম্মদ এ গ্রন্থটি তাঁর মা-বাবার নামে উৎসর্গ করেছেন। এটি সত্যিই প্রশংসনীয়। মানুষমন্ত্র গ্রন্থে বিভিন্ন স্বাদের ৪০টি কবিতা স্থান পেয়েছে। বইটির সেটআপ-গেটআপ-ছাপা-বাঁধাই চমৎকার। প্রচ্ছদেও রয়েছে মননশীলতার বিশুদ্ধ ছাপ। সব মিলিয়ে মানুষমন্ত্র কাব্যগ্রন্থটি কবিতার জগতে নিজের স্থান করে নিতে পারবে বলে আমার ধারণা।

মিজান মোহাম্মদের কবিতাগুলো পড়ে মনে হয়েছে, জীবন ও জগতকে ভেঙেচুরে দেখার নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং উপস্থাপনা কৌশলের অভিনবত্ব রয়েছে তার কবিতায়। প্রায় প্রতিটি কবিতায়ই তার গভীর জীবনবোধ ও প্রখর অন্তর্দৃষ্টির ছাপ রয়েছে। আমার মনে হয়েছে কবিতাগুলো কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার ফসল।

বিশুদ্ধ কবিতা শক্তি ও সৌন্দর্যের আঁধার। অন্যভাবে আমরা বলতে পারি, কবিতা মানব সমাজে শক্তি ও সৌন্দর্যের প্রতিনিধিত্ব করে। সবুজ পাহাড়ের পাদদেশে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি যেভাবে উজাড় করে দেয় তার সৌন্দর্য, ঠিক সেই রকম সৌন্দর্যের স্পন্দন পরিলক্ষিত হয় মিজান মোহাম্মদের কবিতায়। আর অধিকাংশ কবিতাই-প্রচ- শক্তি বুকে ধারণ করে উজ্জ্বল হয়ে আছে এ গ্রন্থের পাতায় পাতায়। শক্তি ও সৌন্দর্যের কারণেই কবিতা পরিবর্তনের শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে ওঠতে পারে। সোঁদা মাটির গন্ধের মতো কবিতার ঘ্রাণ ছুঁয়ে যায় অন্তর্লীন জগৎ। বৃষ্টির জলরাশির মতো প্রাণবন্ত, চঞ্চল ও সতেজ মিজান মোহাম্মদের অধিকাংশ কবিতাই শিল্পমূল্যে উত্তীর্ণ বলে মনি করি।

মিজান মোহাম্মদের কবিতায় ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাত সংশয় ও অসঙ্গতির খ-চিত্র ওঠে এসেছে। তার কবিতা মানুষের মনস্তত্বের সূক্ষ্মতায় জগতকে হৃদয়ের গভীরতা দিয়ে অনুভব করার এক আবেগময় জিজ্ঞাসা। কবির অজান্তে বা অবচেতনের কোনো কোনো সময় সেই জিজ্ঞাসা সভ্যতাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারে। ভ্রাম্যমাণ মেঘের ছায়ার ভেতর দিয়ে ওড়ে যাওয়া মানুষের মনস্তত্ত্ব বুঝতেও চেষ্টা করেন একজন বিশুদ্ধবাদী কবি। কবির জীবন দর্শন তাকে তাড়িত করে। তখন কবিতার পঙ্ক্তির ভেতর থেকে ঠিকরে পড়ে আলো। কবি সময় ও সমাজের ভাষ্যকার। তাই তিনি কবিতার মাঝে সময় ও সমাজচিত্রকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন।

বৈচিত্র্যময় জীবন কিংবা জীবন সংগ্রামের নানা অনুষঙ্গ নিয়ে যে মনস্তাত্তি্বক ঘোর সৃষ্টি হয়, সেই ঘোরের পাঁকচক্রে অনেক কিছুই তলিয়ে যায়। কবির প্রগাঢ় জীবনবোধ ও চিন্তাশক্তির ছায়া আমরা দেখি তার কবিতায়। যেমন- ‘আজও পাখির সঙ্গম পোড়ে প্রতিটি দুধজোছনায়/ যে জোছনাপোড়া শ্বেত-শুদ্ধ সঙ্গম/ কচলে কচলে খায় মানুষ, ছেলান সময়ে/ আউশের ধান, না মাটি বিলায় সোঁদাগন্ধ, যেখানে মিশে যায় মাইনষের সাথে…/
হাঁপিয়ে ওঠা এমন প্রতিটি অমসৃণ রাতে/ আমার পোয়াতি স্বপ্নগুলো প্রসব করে/ কিছু মানুষমন্ত্র…’ (মানুষমন্ত্র)।

জীবনের খতিয়ান খুলে দেখার মতো জাগতিক বিষয়-আশয় ওঠে এসেছে মিজান মোহাম্মদের কবিতায়। কবিতায় তার শৈল্পিক ও সাহসী উচ্চারণ তাকে নিজস্বতার দিকে নিয়ে গেছে। কিন্তু এই শ্বাপদ সংকুল জগতে তিনি অভয়ারণ্য কোথায় খুঁজে পাবেন? দেখা যাক অভয়ারণ্য সম্পর্কে তার চিন্তাচেতনা বা দৃষ্টিভঙ্গি- ‘প্রকট রৌদ্র-মরু হাওয়ায় ভেসে ভেসে চলে/ দুটি তৃষ্ণার্ত মন/ কয়েক ফোঁটা উষ্ণ জলের স্পর্শের জন্য/ নদী আর নৌকা অসহ্য যন্ত্রণায় বার বার/ রাজদ্রোহীর মতো প্রতিবাদে মাথানাড়ে/ পর্দার অন্তরালে…।’ (অভয়ারণ্য)

প্রেমিকার হাত ধরে জ্যোৎস্নার জোয়ারে সাঁতার কাটার সৌভাগ্য সবার হয় না। প্রেমিকার হাত ধরে সাগরের অপার সৌন্দর্য দেখার সৌভাগ্য সবার হয় না। কিন্তু মিজান মোহাম্মদের হয়েছে। এ গ্রন্থের ‘কারিগর’ কবিতায় এ রকম ইঙ্গিত আমরা পাই। এ রকম সংলাপধর্মী কবিতা কবির চিন্তা-চেতনায় নতুনত্বের ছাপ লক্ষ্য করা যায়।

মিজান মোহাম্মদের কবিতাগুলোর প্রতিটি পঙ্ক্তিই উল্লেখ করার মতো। মনে হয় একটি পঙ্ক্তি থেকে আরেকটি পঙ্ক্তি শক্তিশালী। ‘চিরকুট’ কবিতায় কবির আক্ষেপ- ‘যদি আঁকতে ভালোবাসার সারমর্ম/ তবে আমাকে আজ সিঁড়ি মাপতে হত না গো কুসম।’ এরকম অসংখ্য হৃদয়গ্রাহী পঙ্ক্তির সমাহার মিজান মোহাম্মদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মানুষমন্ত্রে’ তার অনেক কবিতায় রোমান্টিক উচ্চারণে করুণ বাস্তবতা ফুটে ওঠেছে। তার কোনো কোনো কবিতায় আধ্যাত্মিকতার ছাপ রয়েছে। কবিতাগুলো নানান রঙের ও নানা বর্ণের অগণিত ফুলের সমাহার। শব্দশ্রমিক বা শব্দের কারিগর হিসেবে মিজান মোহাম্মদ প্রশংসার দাবি রাখেন। এ গ্রন্থের জন্য কবিতা নির্বাচনে তিনি মোটেই দুর্বলতার পরিচয় দেননি।

লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক

নিউজটি শেয়ার করুন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়..

© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ সিলেট দর্পণ ।