বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৪ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তিঃ
আমাদের সিলেট দর্পণ  ২৪ পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে , আমাদেরকে আপনাদের পরামর্শ ও মতামত দিতে পারেন news@sylhetdorpon.com এই ই-মেইলে ।
সিলেটের বাদাঘাট বাইপাস দুই লেনের করতে প্রস্তাব

সিলেটের বাদাঘাট বাইপাস দুই লেনের করতে প্রস্তাব

দর্পণ ডেস্কঃ সিলেটের বাদাঘাট বাইপাস সড়কটি দুই লেনের করতে চায় মহাসড়ক বিভাগ। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি সরজমিন তদন্ত করে রাস্তাটি দুই লেনে করার সুপারিশ করেছে। তবে ভবিষ্যৎ মাথায় রেখে ভূমি অধিগ্রহণ করা যেতে পারে বলে ওই কমিটি মতামত দিয়েছে। এদিকে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি চার লেন সড়ক করার দাবি সিলেটবাসীর। কারণ উত্তর সিলেটের দুটি উপজেলার কোয়ারিগুলোর পাথরবাহী ও পর্যটকবাহী যানবাহন চলাচলের জন্য এই সড়ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি বিদেশি যাত্রীরাও এই সড়ক দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিমানবন্দরে যাতায়াত করতে পারবেন। এ কারণে সড়কটিকে চার লেনের চান সিলেটের মানুষ। সিলেটের কুমারগাঁও-বাদাঘাট-বিমানবন্দর বাইপাস সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার।
সড়কের একাংশ হচ্ছে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক ও অপর অংশ হচ্ছে ভোলাগঞ্জ সড়ক। এই ১২ কিলোমিটার রাস্তার কারণে নানা সমস্যা সিলেটে। এই সড়কটি হচ্ছে বিমানবন্দর-আম্বরখানা সড়কের বিকল্প সড়ক। বর্তমানে বিমানবন্দর-আম্বরখানা সড়কে হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। বাদাঘাট বাইপাস সড়ক নির্মাণ হলে বিমানবন্দর-আম্বরখানা সড়কের ওপর চাপ কমে আসবে। বর্তমানে নানা কারণে ব্যস্ত এ সড়ক। কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট এবং সিলেট সদর উপজেলার বেশির ভাগ মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে এই সড়ক। এ ছাড়া বিমানবন্দর, সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, ক্যাডেট কলেজ ও নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক, পর্যটন এলাকা সাদাপাথর, বিছনাকান্দি, রাতারগুল যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। ফলে নগরীর আম্বরখানা হচ্ছে যানজটের অন্যতম এলাকা। সন্ধ্যা নামলেই পাথরবাহী ট্রাকের কারণে মধ্যরাত পর্যন্ত যানজট নিত্যসঙ্গী। সিলেট-১ আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাইপাস সড়কটির গুরুত্ব অনুধাবন করে সেটিকে চার লেন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এ কারণে ২০১০ সালের ৪ঠা আগস্ট এ সড়কটির নির্মাণকাজের সূচনা হয়। কিন্তু পরিপূর্ণ হয়নি সড়কের কাজ।
৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ পূর্ণাঙ্গ হওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ের পর ২০১৪ সালে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ কয়েক মাস আগে মহাসড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে ওই রাস্তাকে ৪ লেন করার প্রস্তাব নাকচ করা হয়। ফলে সিলেটে এ নিয়ে ক্ষোভ দেখা দেয়। স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে সিলেট-১ আসনের এমপি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এ নিয়ে সড়ক বিভাগকে চিঠিও দেন। তার এই চিঠির প্রেক্ষিতে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম প্রধান জাকির হোসেনের নেতৃত্বে গেল ৮ই আগস্ট সিলেট সফর করেছিলেন একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। ওই টিমে ছিলেন- উপ-প্রধান শামিমউজ্জামান, সওজের রোড সেফটি স্ট্যান্ডার্ড বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর সিদ্দিকী ও পরিকল্পনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিন রেজা। তারা ওই সড়কের ১২ কিলোমিটার এলাকা পরিদর্শন করেন। ফোর লেনের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে স্থানীয়দের সঙ্গেও তারা কথা বলেন। পরে তারা সিলেটের জনপ্রতিনিধিসহ সুশীল সমাজের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। সিলেটে সফরকালে সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে তারা এই সড়ক নিয়ে রিপোর্ট দাখিল করবেন। এরপর সেটি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এদিকে সিলেট থেকে ঘুরে যাওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় গত ১৭ই আগস্ট ওই সড়কের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে গঠিত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
প্রতিবেদন প্রদান করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম প্রধান মো. জাকির হোসেন। ওই প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, সড়কে যানবাহন চলাচল ও ট্রাফিক বিবেচনায় কমিটির কারিগরি সদস্যদের মতামত অনুযায়ী সড়কটি দুই লেনে নির্মাণ করলেই বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হবে। তবে ভবিষ্যতে ‘প্রয়োজনীয়তা বিবেচিত হলে’ এটিকে চার লেনে উন্নীত করার বিষয়টি ‘বিবেচনা করা যেতে পারে’। এ জন্য এখন চার লেনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে প্রতিনিধিদল। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সিলেটের বিভিন্ন মহল থেকে ওঠা দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেট থেকে চার লেনের একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়। ২০১৭ সালে এ প্রস্তাব সংশোধন করে চার লেনের সঙ্গে দুটি সার্ভিস লেন যুক্ত করে সংশোধিত প্রস্তাবনা পাঠানো হয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে। সেই প্রস্তাবনা সংশোধন করা হয় আরো একবার। বছরখানেক আগে চার লেনের সড়ক প্রকল্পের প্রস্তাবনাই যায় মন্ত্রণালয়ে। পরে চলতি বছর চার লেনের প্রস্তাবনা নাকচ করা হয়। আর এই খবরে সিলেটে ক্ষোভ দেখা দেয়। কারণ এই সড়কটি চালু না হলে বিমানবন্দর-আম্বরখানা সড়কের চলমান সংকট দূর হচ্ছে না। কয়েক দিন আগে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষ থেকে সড়কটিকে চার লেনের করার জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি এটিএম শোয়েব এই সড়কটির গুরুত্ব তুলে ধরে এ পত্র দেন। সর্বশেষ সড়কটি দুই লেনের প্রস্তাব করার খবরে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সিলেটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সিলেটের বাদাঘাট বাইপাস সড়ক নিয়ে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সিলেটের সকল মহল যে সড়কটি চার লেন করার কথা বলছেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগও গুরুত্ব বুঝে চার লেনের নকশা করলো, সেই সড়ক দুই লেনে রাখার পক্ষে তদন্ত কমিটিও প্রস্তাব করলো। এটা নাটক ছাড়া আর কিছুই নয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীসহ সুশীল সমাজের নেতারা।

নিউজটি শেয়ার করুন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়..

© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ সিলেট দর্পণ ।