শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তিঃ
আমাদের সিলেট দর্পণ  ২৪ পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে , আমাদেরকে আপনাদের পরামর্শ ও মতামত দিতে পারেন news@sylhetdorpon.com এই ই-মেইলে ।
সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি ঘুরে দেখলেন প্রধানমন্ত্রী

সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি ঘুরে দেখলেন প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক ◾সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি ঘুরে দেখলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।আজ মঙ্গলবার সকালে হেলিকপ্টার যোগে তিনি পর্যবেক্ষণ করলেন বন্যা পরিস্থিতি।

এক ব্রিফিং এ তিনি বলেন, বন্যার প্রস্তুতি আমাদের ছিলো। আমি আগেই নির্দেশ দিয়েছি খাদ্যগুমদামের ক্ষতি যেনো না হয়। পাশাপাশি খাদ্য বের করার রাস্থা যেনো থাকে। হাওর অঞ্চলে এলিভেটেড রাস্থা করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন- এভিভেটেড রাস্থা হলে হাওরের কোনো ক্ষতি হবে না। এজন্য আমরা সচেষ্ট রয়েছি।

বন্যা নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরি করে সহায়তা দেওয়া হবে।

সিলেট বিভাগের সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও বন্যাদুর্গতদের পুর্নবাসন নিয়ে আজ মঙ্গলবার (২১ জুন) সিলেট সার্কিট হাউজে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে সকালে হেলিকপ্টারে করে সিলেট সুনামগঞ্জ ছাড়াও তিনি নেত্রকোনার বন্যা দুর্গত এলাকার পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন। পরে সিলেট সার্কিট হাউজে স্থানীয় আওয়ামী লীগএবং প্রশাসনকে বন্যা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে এই বন্যা-প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচার মানসিকতা থাকতে হবে। সে কারণে আমাদের অবকাঠামোগত যত উন্নয়ন হবে সেগুলো মাথায় রেখে করতে হবে। তিনি বলেন, বন্যার কারনে অনেক জায়গা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ কারনে আমরা সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে। উদ্ধার কাজ চালাতে সবাই কাজ করেছে। বিশেষ করে দলীয় নেতাকর্মীরাও নিরলস চেষ্টা করেছেন।
এবারের বন্যা অনেক দেরিতে এসেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৮ সালের সেই দীর্ঘস্থায়ী বন্যার পর। বন্যা এলে পরপর আসে। ৫৫ ও ৫৬ সালে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার পর। এবার সিলেট বিভাগে পরপর তিনবার বন্যা হয়েছে। এটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। প্রতিবার নতুন নুতন জায়গা প্লাবিত হয়েছে। আমাদের যে ফসল বা যা কিছু ক্ষতি হয়েছে,আমরা গতকালকেও মিটিংয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্যার সময় নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, এর আগে নৌকায় করে আমাকে বিভিন্ন জনসভায় যেতে হয়েছে। কানাইঘাট, শাল্লা নৌকা করে গেছি। সে সব অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাহেরপুরে তো জনসভা মঞ্চেই পানি হয়ে গিয়েছিল। নৌকায় করে গিয়ে মিটিং করেছিলাম।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আগে থেকেই আমার কার্যালয়ে বন্যার বিষয়ে প্রস্তুতির জন্য বলে রেখেছিলাম। প্রায় এক-দেড় মাস আগে থেকেই সবাইকে বলতাম, এবার খুব বড় একটা বন্যা আসবে, প্রস্তুতি নেতে। প্রাকৃতিক একটা পরিস্থিতি দেখে আন্দাজ করা যায়। সেটা দেখেই আমি সবসময় বলছি এবার বড় বন্যা আসবে। ১০ বছর ১২ বছরের মধ্যে এমন বন্যা আসে। এখন রাস্থাঘাট অনেক উন্নত হয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই যে বন্যা হলো, এতে আমাদের কষ্ট-ক্ষতি হচ্ছে এটা ঠিক, আবার আমাদের লাভও আছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। এখানে যদি আমাদের আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার অর্থাৎ ভূগর্ভস্থ পানি যদি কমে যায়, ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বেশি থাকে। কিন্তু ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার যদি ঠিক থাকে, ভূমিকম্প আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘এই জিনিসটা সবাই জানে যে, এই বন্যায় আমাদের আন্ডারগ্রাউন্ড রিচার্জ হবে। পাশাপাশি যে পলি আসবে, তাতে জমির ফার্টিলিটি বাড়বে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এগুলো সবসময় মাথায় আছে আমাদের। যখনই পানিটা টানবে, সঙ্গে সঙ্গে কৃষক যাতে চাষবাস করতে পারে, তার ব্যবস্থা আমরা নেব। যদি বন্যা একটু দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে ধানের যে চারা তৈরি করা, তার জন্য বীজ সংরক্ষণ করে রাখা আছে, ফার্টিলাইজার রাখা আছে, সঙ্গে সঙ্গে আমরা দেব এবং কৃষক যেন আবার ফসল ফলাতে পারে, সে ব্যবস্থাটাও আমরা নেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাছের কিছু অসুবিধা, যারা মাছ পালে, সেখানে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এটাও যেমন সত্যি, আবার এই বন্যায় কিন্তু পুকুরে মাছের পোনাও আসে। এটাও মাথায় রাখবেন। আগে তো আর মাছ পালতো না, বন্যার সময় আমাদের বাড়িতেই দেখেছি, পুকুরের একপাশ কেটেই দিতো, যাতে বন্যার পানি ঢুকে এবং বন্যার পানির সঙ্গে মাছের পোনা ঢুকে। দু-দিকটাই আছে, ক্ষতিও হচ্ছে, যারা মাছ চাষ করে তাদের ক্ষতি হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা ব্যবস্থা নেব। জুলাই মাস থেকে আবার আমরা মাছের পোনা দেব, পোনা ছাড়ব।’
প্রধানমন্ত্রী পরে সিলেট, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকের হাতে তার পক্ষ থেকে সিলেট ও সুনামগঞ্জবাসীর জন্য ত্রান সহায়তা তুলে দেন।

প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, রেঞ্জ ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিলেট সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী,সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান,সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান প্রমুখ।

নিউজটি শেয়ার করুন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়..

© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ সিলেট দর্পণ ।