মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পাকিস্তানি বাহিনীর দালাল, খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত ‘ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’র স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হিসেবে ওই আন্দোলন ও গণআদালত গঠন করা সহ নব্বইয়ের দশকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা পুনরুজ্জীবিত করার ঐতিহাসিক সংগ্রামে নুরুল ইসলাম নাহিদ গুরুত্বের সাথে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করেন।
নরুল ইসলাম নাহিদ ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) অন্যতম সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দীর্ঘ সময় ধরে পার্টি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।এ ছাড়াও তিনি পার্টির আদর্শগত শিক্ষা এবং আন্তর্জাতিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে নুরুল ইসলাম নাহিদ সিপিবির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে গুণগত পরিবর্তন দেখা দিলে বাস্তবতার বিবেচনায় সেই প্রক্রিয়ায় ১৯৯৪ সালে অন্যান্য সহকর্মীকে নিয়ে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।রাজনৈতিক পরিক্রমায় বর্তমানে নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের প্রেসিডিয়াম সদস্য।এর আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।
নুরুল ইসলাম নাহিদ ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সিলেট-৬ আসনে জাতীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে জয়লাভ করেন।এ সময় তিনি জাতীয় সংসদের শিক্ষা বিষয়ক স্হায়ী কমিটির সদস্য মনোনীত হন।২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে নৌকা মার্কা নিয়ে বিপুল পরিমাণ ভোটে তিনি জয়লাভ করেন।এরপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার হাত ধরে তিনি প্রথমে শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসিন হন।পরবর্তীতে তিনি শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসেন। (২০০৯-২০১৪) সালে তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তনের মাধ্যমে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেন। তার উদ্যোগে প্রথমবারের মতো সর্ব মহলের মতামত নিয়ে সমগ্র জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’ প্রণয়ন করা হয়। যা জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন করা হয়।যা খুব সহজে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছিল।
নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষাক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন করে নতুন প্রজন্মকে আধুনিক মানসম্মত যুগোপযোগী শিক্ষা এবং আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার অনবদ্য প্রয়াস। অন্যদিকে নৈতিক মূল্যবোধের জাগরণ, সততা, নিষ্ঠা, জনগণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, দেশপ্রেমিক হিসেবে উদ্বুদ্ধ করে এক নতুন আধুনিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি গত অর্ধযুগ থেকে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্যোগ, শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, ভর্তি নীতিমালা বাস্তবায়ন, যথাসময়ে ক্লাস শুরু, নির্দিষ্ট দিনে পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ, ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ, সৃৃজনশীল পদ্ধতি, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রয়োগ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রভৃতি ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।  স্বচ্ছ গতিশীল শিক্ষা প্রশাসন গড়ে তোলা, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আকৃষ্ট করে ঝরে পড়া বন্ধ করা ও শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রথম বারের মতো ২০১০ শিক্ষাবর্ষে স্কুল ও মাদ্রাসায় সব শিক্ষার্থীকে প্রথম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ১৯ কোটি বই বিনামূল্যে যথাসময়ে পৌছে দিয়ে দেশবাসীকে বিস্মিত করেছিলেন।তিনি করিগরি শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের ছাত্র সমাজকে মানব সম্পদে উন্নিত করার লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন সহ নানামুখি ট্রেড কোর্স চালু করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছিলেন।সেই সাথে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় তিনি নিজের জ্ঞান, ধ্যান ও মেধা দিয়ে যে পরিবর্তন এনেছিলেন তার নজির ইতিপূর্বে প্রকাশ পায়নি।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নুরুল ইসলাম নাহিদ যে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছেন তা সমগ্র জাতির কাছে অত্যন্ত প্রশংসিত ও সমাদৃত হয়েছে।তার প্রণিত শিক্ষা নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিশ্ব সমাজে স্বীকৃতি পেয়েছে।সেই সাথে আমরা আসীন হয়েছি মর্যাদার আসনে।
নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রণীত শিক্ষা ব্যবস্থাকে আজ বিশ্বের বহু দেশ মডেল হিসেবে গ্রহণ করছে।শিক্ষা বিপ্লবের মহা নায়ক হয়ে নুরুল ইসলাম নাহিদ আমাদের মাঝে বেচে থাকবেন যুগ থেকে যুগান্তরে।আজ ৫ জুলাই এই মহান পুরুষের জন্ম দিনে বিনম্র শ্রদ্ধা, কামনা করি তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু।
আপনি আমাদের মাঝে হাজার বছর বেচে থাকুন-শুভ কামনা ও প্রত্যাশা।
লেখক :
পলাশ আফজাল
সম্পাদক : সিলেট দর্পণ
সদস্য, বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগ,সিলেট।
polashafzal@gmail.com