মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৩ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তিঃ
আমাদের সিলেট দর্পণ  ২৪ পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে , আমাদেরকে আপনাদের পরামর্শ ও মতামত দিতে পারেন news@sylhetdorpon.com এই ই-মেইলে ।
মেশিনে হাত রাখতেই ৪২ প্রকারের ভুয়া রিপোর্ট ; চিকিৎসক গ্রেফতার

মেশিনে হাত রাখতেই ৪২ প্রকারের ভুয়া রিপোর্ট ; চিকিৎসক গ্রেফতার

দর্পণ ডেস্ক : পাবনার পৌর এলাকার থানাপাড়ায় দীর্ঘদিন চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগে ইউনি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস লিমিটেডের মালিক ও চেয়ারম্যান এম এ আকবরকে আটক করেছে পুলিশ।

বুধবার (২১ অক্টোবর) রাতে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।

মেশিনে হাত রাখা মাত্র কম্পিউটার মনিটরে উঠে আসছে মানবদেহের মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে হার্ট, কিডনি, ফুসফুসসহ শরীরের ৪২ প্রকারের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার অবস্থা! তাৎক্ষণিক দেয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে চিকিৎসাপত্রও ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে, সঙ্গে সাত থেকে দশ হাজার টাকার ওষুধ।

হাতের চাপে মুহূর্তেই এমন পরীক্ষা ও সে অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদানের কোন কার্যকর পদ্ধতি আদৌ আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেনি জেলার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বরং কোন অনুমোদন ছাড়াই পাবনার পৌর এলাকার থানাপাড়ায় চিকিৎসার নামে দীর্ঘদিন ধরে অভিনব কায়দায় এ প্রতারণা করে আসছিল বলে ইউনি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ।

বুধবার রাতে সেখানে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানের মালিক ও চেয়ারম্যান এম এ আকবরকে আটক করে পুলিশ।

ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত প্রায় একবছর ধরে সদর থানা ভবন সংলগ্ন একটি আটতলা ভবনের চারতলার তিনটি ফ্লাট ভাড়া নিয়ে এমন প্রতারণার ফাঁদ খুলে বসেন শহরের নয়নামতি এলাকার আকবর হোসেন ও তার সহযোগীরা। পাবনার দাপুনিয়া বিবি দাখিল মাদ্রাসা থেকে এসএসসি সমমান পরীক্ষায় পাশ করে নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে ইউনানী ও অ্যালোপেথিক পদ্ধতির চিকিৎসাও দেন আকবর। আকর্ষণীয় বেতনের লোভ দেখিয়ে জামানত নিয়ে প্রায় অর্ধশত নারী পুরুষকে নিয়োগ দেয় ইউনি হেলথ সার্ভিস নামের প্রতিষ্ঠানটি। স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে আসা প্রতি রোগীর জন্য আকর্ষণীয় কমিশনের আশ্বাস দেয় কর্তৃপক্ষ।

ইউনি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের স্বাস্থ্যকর্মী ফারজানা লাবণী বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের কথায় বিশ্বাস করে আমি আমার বেশ কয়েকজন স্বজন ও প্রতিবেশীদের চিকিৎসা গ্রহণের জন্য রাজি করিয়ে এই চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে আসি। হাতের স্ক্যান পরীক্ষার জন্য এক হাজার টাকা ও পরে প্যাকেজ চিকিৎসায় ওষুধ বাবদ আট থেকে দশ হাজার টাকা করে নেয়া হয় তাদের কাছ থেকে। ওষুধের কোর্স সম্পন্নের পরও কোন রোগীরই স্বাস্থ্যের উন্নতি না হওয়ায় তারা আমাকে নানা প্রশ্ন করেন। এতে আমারও সন্দেহের সৃষ্টি হয়।’

একই ধরণের অভিজ্ঞতার কথা জানান প্রতিষ্ঠানটির স্বাস্থ্যকর্মী আবু তালেব, মনিরা, নাদিরা, আফরিন, শারমিন, সালমা, নাজমুল, আজিজুলসহ বেশ কয়েকজন।

স্বাস্থ্যকর্মী মনিরা বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় চাকরি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। এখানে আমরা সবাই মিলে বকেয়া বেতন চাইলে তারা নানা টালবাহানা শুরু করে। বিষয়টি আমরা গণমাধ্যমকর্মীদের জানালে তারা এসে মালিক এম এ আকবরের সাথে কথা বলে ইউনি হেলথের প্রতারণার বিষয়টি ধরে ফেলেন। পরে পুলিশ এসে তাকে আটক করে নিয়ে যায়।’

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসিম আহমেদ আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মী ও ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে আমরা বুধবার রাতে ইউনি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের অফিসে অভিযান চালাই। সে সময় প্রতিষ্ঠানের মালিক এম এ আকবর স্বাস্থ্যসেবা প্রদান কিংবা পরীক্ষার কোন অনুমোদনপত্র দেখাতে ব্যর্থ হন। তিনি মাদ্রাসা থেকে এসএসসি সমমান পরীক্ষায় পাশ করে কীভাবে নামের আগে ডাক্তার লিখে চিকিৎসা দিচ্ছেন তারও সদুত্তর দিতে পারেননি। প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া ও প্রতারক চক্রের কাজ বলে মনে হয়েছে। বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের পর আমরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক ডা. সালেহ মোহম্মাদ আলী জানান, স্পর্শের মাধ্যমে একসাথে ৪২টি পরীক্ষার এমন কোন মেশিন চিকিৎসা বিজ্ঞানে আছে বলে আমার জানা নেই, বিষয়টি বাস্তবসম্মতও নয়। ল্যাবরেটরি পরীক্ষা ছাড়া রক্ত ও মস্তিষ্কের পরীক্ষা কীভাবে সম্ভব আমার জানা নেই।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মেহেদী ইকবাল জানান, ইউনি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস নামে কোন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ অবগত নয়। তাদের আইন বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে  আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার (২২  অক্টোবর) বিকেলে এ ঘটনায় সদর থানার এস আই জহরুল ইসলাম বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ও স্বাস্থ্যকর্মী জাকির হোসেন বাদী হয়ে সদর থানায় প্রতারণা মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলায় এম এ আকবরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়..

© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ সিলেট দর্পণ ।