শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:৪২ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তিঃ
আমাদের সিলেট দর্পণ  ২৪ পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে , আমাদেরকে আপনাদের পরামর্শ ও মতামত দিতে পারেন news@sylhetdorpon.com এই ই-মেইলে ।
মন্ত্রিপরিষদের আগামী বৈঠকে আইন সংশোধনের প্রস্তাব আসছে, ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

মন্ত্রিপরিষদের আগামী বৈঠকে আইন সংশোধনের প্রস্তাব আসছে, ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

দর্পণ ডেস্ক : ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবনের পরিবর্তে মৃত্যুদন্ডের জন্য সংশ্লিষ্ট আইনে সংশোধনী আনা হচ্ছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, প্রস্তাবিত সংশোধনী সোমবার অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই সংশোধনী আনা।
নোয়াখালী বেগমগঞ্জে ঘরের ভিতরে ঢুকে বিবস্ত্র করে এক নারীকে নির্যাতন ও ধর্ষণ চেষ্টার ৩২ দিন পর এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এবং এর আগে সিলেটের এমসি কলেজে এক গৃহবধূকে তার স্বামীর সামনে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করার পর সারা দেশে এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। শুরু হয় আন্দোলন। পুলিশ আসামিদের কয়েকজনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে এবং ওই নারীকে নিরাপদ হেফাজতে নিয়েছে। বেগমগঞ্জের ঘটনার পর ধর্ষণকারীদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা-উপজেলায় তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। এই আন্দোলন চলার মধ্যে বেগমগঞ্জের ঘটনার ধারাবাহিকতায় গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার খবর প্রায় প্রতিদিন সংবাদপত্রে উঠে আসছে। এর মধ্যেই সরকার আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিল।
এই অবস্থায় সরকারের তরফ থেকে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল রাতে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার রাতে তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে সংশোধিত প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের জন্য। নির্দেশনা পাওয়ার পর তিনি আইন সংশোধনের কাজ শুরু করেছেন সোমবারে সংশোধিত আইনের প্রস্তাবনা মন্ত্রিসভায় তোলা হবে। এদিকে আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মৃত্যুদন্ডের বিধান রাখতে আইনে যে পরিবর্তন আনা সেটা মূলত মৌলিক দুটি আইন। এর একটি হচ্ছে দন্ডবিধি আইন ১৮৬০ সালের ধারা ৩৭৫ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আইন ২০০০ এর ধারা ৯।
এই দুটি আইনের দুটি ধারায় সংশোধন এনে সর্বোচ্চ সাজার বিধান যুক্ত করা হচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আইন অনুযায়ী, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড। আর ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে দোষী ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড। এর পাশাপাশি দুই ক্ষেত্রেই অর্থ দন্ডের বিধান রয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ট্রাইব্যুনালে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সাত দিন থেকে এক মাস এবং মামলা নিষ্পত্তির জন্য ১৮০ দিন (ছয় মাস) সময় বেঁধে দেওয়া থাকলেও বাস্তবে ওই সময়ের মধ্যে রায় দেওয়া সম্ভব হয় না।
এ ছাড়া ধর্ষণ এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তির নজির কম। ধর্ষণের বেশিরভাগ মামলা বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় ধামাচাপা পড়ে যায়। তাছাড়া ঠিকমতো ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়া, সামাজিক জড়তা, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপসহ নানা কারণে বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশে ৮৮৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ধর্ষণের পর মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। আর এই আট মাসে ধর্ষণচেষ্টা ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৯২ জন নারী এবং ৯ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু অনেক অভিযোগ থানা পর্যন্ত না পৌঁছানোয় প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে অধিকারকর্মীদের ধারণা। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ বছরে ধর্ষণের ঘটনায় ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার থেকে মামলা হয়েছে ৪ হাজার ৫৪১টি। এর মধ্যে আসামির শাস্তি হয়েছে মাত্র ৬০টি ঘটনায়। এসব কারণে ধর্ষণের অপরাধে শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে মৃত্যুদন্ডের বিধান করার পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে বিচার ও রায় কার্যকর করার জন্য আইন সংশোধনের দাবি রয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের। চলতি বছর জানুয়ারিতে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় এক রিট মামলায় রুল জারি করেছিল হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ। ষোলো বছর বা তার কম বয়সী শিশু ধর্ষণের শিকার হলে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড রেখে আইন করতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছিল সেই রুলে। বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।
এদিকে সাম্প্রতিক ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় সরকারের বিভিন্ন দফতরে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন সম্পাদক মোহাম্মদ ফুয়াদ হোসেন। সেখানে ধর্ষণের দ্রুত বিচারে বিশেষ আদালত গঠন এবং ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড চাওয়া হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড করার দাবিকে সমর্থন জানিয়ে গত ৭ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, এদের ছোটখাটো লঘু দন্ড দিয়ে লাভ নেই। সর্বোচ্চ বিচারের যে দাবি উঠেছে, আমার মনে হয় এটা অযৌক্তিক নয়। এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনকে আপসহীন মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়..

© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ সিলেট দর্পণ ।