বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তিঃ
আমাদের সিলেট দর্পণ  ২৪ পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চলছে , আমাদেরকে আপনাদের পরামর্শ ও মতামত দিতে পারেন news@sylhetdorpon.com এই ই-মেইলে ।
অনলাইনে স্কুল: অভিভাবকের ঘাড়েই পড়ে সকল দায়িত্ব

অনলাইনে স্কুল: অভিভাবকের ঘাড়েই পড়ে সকল দায়িত্ব

মিজান মোহাম্মদঃ ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাইজা কালাম। নগরীর একটি স্কুলে ইংরেজি ভার্সনে পড়ালেখা করে। মার্চ থেকে স্কুল বন্ধ। শুরুতে স্কাইপে একঘণ্টা ক্লাস করতো। তবে এখন জুমের মাধ্যমে চল্লিশ মিনিট করে তিনটা ক্লাস করে সে। স্বাভাবিক সময়ে স্কুলে কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা ব্যয় করতে হতো। তবে গত তিন মাসে অনলাইনে পড়ালেখা করতে গিয়ে সেটি দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় নেমে এসেছে। দ্রুততম সময়ে ক্লাস শেষ করতে শিক্ষকরা পড়ানোর চেয়ে হোমওওয়ার্ক দিয়েছেন বেশি। ফলে শিশুদের পড়া প্রস্তুত করে দেওয়ার ভারটি পড়েছে মূলত অভিভাবকদের ওপর।

অভিভাবকরা বলছেন, অনলাইনে পড়ালেখা নিয়ে শুরু থেকে একটু অস্বস্তিতে থাকলেও বাস্তবতার নিরিখে মেনে নিতে হয়েছে। কিন্তু আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজটি করা যেত। বেশিরভাগ সময়ে ইলেক্ট্রিসিটি, নেট, প্রভৃতি সমস্যা নিয়ে হিমশিম খেতে হয়। তার ওপর রয়েছে বাড়তি হোমওয়ার্কের বোঝা। সব মিলিয়ে একধরনের গা ছাড়া ভাব আছে প্রতিষ্ঠানের।

এদিকে সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনলাইন ক্লাসের দশা আরও বেহাল। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর অনলাইনে অংশগ্রহণের বাস্তবতাই নেই।

সম্প্রতি ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) আয়োজিত একটি গবেষণা বলছে, করোনার প্রাদুর্ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় উল্লেখযোগ্য হারে কমছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সময়। আগে যেখানে গ্রামের শিক্ষার্থীরা দিনে স্কুল, কোচিং ও বাড়িতে নিজেদের পড়ালেখা মিলে ১০ ঘণ্টা ব্যয় করত, এখন তা নেমে এসেছে মাত্র দুই ঘণ্টায়। সেই হিসেবে ৮০ শতাংশ সময় কমেছে পড়াশোনার। গবেষণায় দেখা যায়, মাত্র ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনে ‘ঘরে বসে শিখি’ ও ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ এই দুটি অনুষ্ঠান দেখছে।

শহুরে মধ্যবিত্তের জীবনেও এই সমস্যা রয়ে গেছে। নগরীর পুলিশলাইন উচ্চবিদ্যালয়ের নাদিয়া সুলতানা। ষষ্ঠ শ্রেণীর এই শিক্ষার্থীর মা সুরাইয়া বেগম প্রকাশ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘বেতনের অর্ধেক শিক্ষকদের না দিয়ে মায়েদের দেওয়া উচিত ছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাস চলাকালে পাশে অভিভাবকদের বসে থাকতে হয়। বাচ্চারা পুরো বিষয়টা বুঝতে পারে না অনলাইনে। তার ওপর আছে নেটওয়ার্কের সমস্যা। হয় আমার বাসায় বিদ্যুৎ নেই, নাহয় একটু পরে শিক্ষকের বাসার বিদ্যুৎ চলে যায়। শিক্ষকরা যতটা না পড়িয়েছেন, তারচেয়ে এই সময়টায় বাড়ির জন্য বেশি পড়া দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছেন। পুরো বিষয়টা মনিটরিংয়ের মধ্যে থাকলে আরও ভালো হতে পারতো।’

স্কলার্সহোম স্কুলের একজন অভিভাবক বলেন, আমার বাচ্চার বয়স বারো বছরের কম। সে অনলাইনে ক্লাসে বসে যখন, তখন বাধ্যতামূলক কারও না কারও তার সঙ্গে থাকা লাগে। করোনার সময়ও আমাদের দুজনকেই অফিস করতে হয়েছে। শিশুটি তাহলে কীভাবে ক্লাসে অংশ নেবে। ফলে বেশিরভাগ সময়ই সে ক্লাস করতে পারেনি। এতে করে আমাদের ওপর চাপ বেড়েছে। স্কুলের অনুমতি নিয়ে পরবর্তীতে কাজগুলো তাকে শেখাতে হয়েছে।’

সিলাম পদ্মলোচন বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো: রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘আরও ভালো হয়তো করা যেত, কিন্তু না হওয়ার চেয়ে অনলাইনের মধ্য দিয়ে এই যোগাযোগ থাকা খুব কাজের হয়েছে। সামনাসামনি যে পাঠদান, সেটি অনলাইনে কখনোই হবে না। কিন্তু আমরা চেষ্টা করেছি যাতে শিশুরা নিয়মানুবর্তিতা ভুলে না যায় এবং তাদের যে সিলেবাস, সেগুলো শেষ করার একটা গাইডলাইন পায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনলাইনে গুরুত্ব দিলে নানা সৃজনশীল কাজে উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব। যেমন ফটোগ্রাফি, শর্টফিল্ম বানানো, চিত্রাঙ্কন, গান নিয়ে আড্ডা (শেখানো নয়) এবং এসবের পাশাপাশি শরীরচর্চা ও যোগব্যয়ামের ক্লাস। এসব এই সময়ে শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ রক্ষায় অনেক ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। এই সময়ের একজন ছাত্র বা ছাত্রীর তার ছাত্রত্ব ভুলে না যাওয়াই যথেষ্ট। অভিভাবক বাড়িতে যদি বই নাড়াচাড়ার অভ্যাস রাখতে পারেন, সেটাও কম নয়। তারপরেও আমরা বলতে চাই না যে আমরা আমাদের সর্বোচ্চটাই দিতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের আর কোনো অপশন নেই।’

 

লেখকঃ সম্পাদক – মাসিক গোপলা

নিউজটি শেয়ার করুন আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়..

© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ সিলেট দর্পণ ।