রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ১০:৩৫ অপরাহ্ন
দর্পণ ডেস্ক : যে পণ্য কারও কাছে পরিত্যক্ত, ব্যবহার অনুপযোগী; সেই একই পণ্য আবার অনেকের কাছে মহামূল্যবান। এমনকি কয়েক যুগ ধরে এমন পণ্য বিক্রির জন্য গড়ে উঠেছে প্রসিদ্ধ বাজারও। যেখানে হাজার টাকার সামগ্রী মেলে মাত্র ১০ টাকায় বা তারচেয়েও কমে।
বাহান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলির পুরান ঢাকা। বর্তমান বাস্তবতায় এই উপমা হয়তো অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছে, তবে এখনও স্বমহিমায় টিকে আছে অনেক কিছুই। তেমনই এক বিচিত্র বাজারের সন্ধান মেলে বেগম বাজারের বেচারাম দেউরিতে।
এখানে ভোরের আলোকে পেছনে ফেলে শুরু হয় কর্মব্যস্ততা। শুধু বিক্রি নয়, এই বাজারে দোকানির অপেক্ষা কাঙ্খিত পণ্য ক্রয়েরও। অভিজাত শপিং মল যাদের কাছে স্বপ্ন, এমনকি ভাগ্য বিড়ম্বনায় ফুটপাতের পণ্যও ক্রয়ক্ষমতার বাইরে, সেসব মানুষের ভরসার কেন্দ্র এটি।
লাল কাপড়ে কাজ করা আর সোনালী পাড়ের একটি ঘোমটা দেখিয়ে এক বিক্রেতা জানান, এটি নতুন অবস্থায় কিনতে গেলে ৫ থেকে ৬শ’ টাকা লাগবে। আর এখানে এটা মিলছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়।
এখানের ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছেন যারা কাজ করতে ঢাকায় এসেছেন; থাকছেন মেসে। তারা এখানকার পুরান কাপড় কিনেন এজন্য যে এটা আর হারানোর ভয় নাই।
নেই চকচকে মনোগ্রাম, দামি মোড়কের আচ্ছাদন কিংবা পুতুলরাণীতে সাজানো প্রদর্শনী। অধিকাংশ পোশাকই রং হীন, বিবর্ণ। তবুও কারও না কারও মনের কোণে রংধনুর রং ছড়ায় পণ্যগুলো। প্রাচীন বিনিময় প্রথাই এখানকার পণ্যের মূল উৎস। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এখানে ফেলনা নয় ছেঁড়া কিংবা নষ্ট কাপড়টিও।
যেগুলো মানুষের জন্য একদম ব্যবহার অনুপযোগী সেগুলো গ্যারেজ, কারখানায় যায়। ওগুলো দিয়ে ধোয়ামোছা করে।
একজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তিনি এই বাজারে এসে ৩টা জামা বিক্রি করেছেন ৬০ টাকায়। এখান থেকেই তিনি আবার দুইটা লুঙ্গি কিনবেন।
ঠিক কবে থেকে বেচারাম দেউরিতে এমন কাপড়ের দোকান গড়ে ওঠে সেই প্রশ্ন নিয়ে রয়েছে নানা মুনির নানা মত। তবে অনেকেরই অনুতাপ পূর্বের জৌলুস হারিয়ে, আজ ছেঁড়া কাপড়ের মতোই বিবর্ণ এই বাজার।
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ সিলেট দর্পণ ।